ক্ষমার ভাষায় গড়া হোক হৃদয়ের সেতু!

99

ভুল সবার হয়। যে আগে বুঝতে পারে, ক্ষমা চায়—সে দ্বিতীয়জন থেকে শ্রেষ্ঠ। রাগ জিইয়ে রেখে, অভিমান জমা করে জীবন সংক্ষিপ্ত করলে কার লাভ, কার ক্ষতি? অভিযোগের বক্স ভেঙে ছুঁড়ে ফেলে দিলে তবে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন। আগ বাড়িয়ে হাত বাড়ালে সম্মান কমে না। মানুষের সাথে ভালো আচরণ করলে, মিষ্টি কথা বললে সম্মান বাড়ে। অন্যের ভুলে আপনি লজ্জিত হোন, তবুও সম্পর্ক টিকিয়ে নিন। যে ভুল করে, সে যেদিন বুঝতে পারবে ভুল তার—সেদিনের পর থেকে আজীবনের জন্য গোলাম হবে।

একটু ‘সরি’ বললে কী এমন হয়? ক্ষতি নয় বরং উপকার হয়। এই যে ইগো, অহেতুক অহংকার প্রিয়জনের মন থেকে আমাদের কত দূরে নিক্ষেপ করে, তা আমরা মাপি না! আমরা জানিই না যে, সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সেই আসনে আমরা আর নাই। খারাপ আচরণ করতে করতে, কটু কথা বলতে বলতে কিংবা বুকে ব্যথা দিতে দিতে আমরা আসলে অন্যের মন থেকে নাই হয়ে যাই। তখন এক সময়ের ‘আপন’-এর উপস্থিতি অসহ্য মনে হয়। মনে জায়গা না পেলে, অন্য কোথাও থেকে আসলে যত্ন-দরদে থাকা হয় না। আগন্তুকের জোয়ার-ভাটার মতো তখন সেসব মানুষ খোঁজ-খবরের বাইরের থাকে!

অন্যের দোষ চোখে পড়ার মতো যদি নিজের ভুল চিহ্নিত হয়, তবে তৃতীয় পক্ষের সালিশদার দরকার হয় না। আমার ভুলের জন্য নিজেকে শাসালে, শুধরে নিলে সময় সুন্দর ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। যত্নের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব মানুষকে মূল্যবান/উপেক্ষিত করে তোলে। একটু একটু ছাড় দিলে অশান্তি থেকে পাড় পাওয়া যায়। অসন্তোষ কমালে, আশাবাদ জমালে এবং অভিযোগ মাড়ালে সে মানুষ শান্তির দুয়ারে দাঁড়াবেই। ভুল স্বীকার করা, বিশ্বাস রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং ছায়া হয়ে মায়া বাড়ানো—এসব সম্পর্কের জরুরি রসদ।

একবার হাত বাড়িয়ে দেখুন, হাত-হাত পাবেন। মন গুটিয়ে রাখলে কেউ খুঁটিয়ে জাগাতে আসবে না। এক কদম বাড়ালে গন্তব্য আপনার দিকে এক কদম এগিয়ে আসবে। কারো আপন হতে তাকে আপন ভাবতে হয়। বিশ্বাসে বুকে ছুরি চালিয়ে ভরসা পাবেন—এটা অবিশ্বাস্য। মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানানো যায়, তবে স্থায়ী ধোঁকা কাউকে দেওয়া যায় না। মানুষ হয়ে উঠতে স্বার্থপরতা ভুলতে হবে, ক্ষতে যত্ন করতে হবে এবং বিপদে পাশে থাকতে হবে। প্রয়োজনে যাকে পাওয়া যায়, সেই তো প্রিয়জন হয়ে ওঠে। উড়ে এসে জুড়ে বসা কোকিলও সিজনের দুই মাস আত্মীয়; বারো মাস দেখা হয় দোয়েল-শালিকের সাথে!

প্রচণ্ডভাবে ঠকো, কিন্তু সামান্যতমও ঠকিও না। সুখের ব্যবসায় লাভবান হতে মানুষকে নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত উপকার করে যাও। হাত বাড়াও বিপন্নকে রক্ষা করতে। নত হও, বিনয়ী আচরণ করো সর্বত্র। ছোটোর সামনে আরও খাটো হলেও ইজ্জত যায় না, বরং বাড়ে। সুন্দর আচরণ, সত্য কথা এবং সরল জীবনযাপন মানুষকে কত বড় করতে পারে, তা মহামানবদের মধ্যে দেখো। অভিমানের ভাষা বুঝতে পারা, অভিযোগের কারণ খুঁজে সেসব সমাধান করা—সুখী হওয়ার পূর্বশর্ত। রাগে-ক্ষোভেও জীবন যাবে, কিন্তু সুখস্মৃতির ফলক উন্মোচিত হবে না। দুঃখে দীর্ঘজীবন কাটিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়াকে সার্থক জনম বলে না। মুখোশের বাইরে যে সত্য—সেটা অর্জনই মানবধর্মের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হোক। আমরা যে ভালোবাসার পক্ষ হই।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।