১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ এবং আজ আমরা

124
ছবি- সংগৃহীত
ছবি- সংগৃহীত

১৮৫৭ সালের মে মাসের প্রথম দিকে  বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বেরেকপুরে  ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনা ক্যাম্পে সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা হয়। যা জুন মাস জুরে সমগ্রও ভারতবর্ষের  সেনাবাহিনীবাস সমুহে ছড়িয়ে পরে। যা ছিল সাধারন মানুষ তথা সিপাহিদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সুবেদার রজব আলী ও   সিপাহী মঙ্গল পান্ডে সহ অসংখ্য  শহীদের  আত্মত্যাগে অত্যাচারী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের অবসান হয়। দীর্ঘ  চার মাস অবরোধের পর মোগল সম্রাট বাহদুর শাহ জাফর বিদ্রোহের  নেতৃত্ব নিতে অসমর্থ হলে  ব্রিটিশরা দিল্লি দখল করে নেয়। বিদ্রোহ সাময়িক ব্যর্থ হয় এবং বৃটেনের  রানী ভিক্টোরিয়া অধীনে ভারত সরাসরি  ইংরেজ শাসনে চলে যায় ।

অথচ  তারও ৯২ বছর পূর্বে ১৭৬৫ সালে আমেরিকায় বিপ্লবের  মাধ্যমে  ১৩টি রাজ্য থেকে বৃটেনকে বিতাড়িত করেছিল। এবং ৬৮ বছর আগে ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই  ফরাসি বিপ্লব সংগঠিত  হয়েছিল।  যা বিদগ্ধ মানুষ যথারীতি  স্মরণ করে।

ভারতের সিপাহি বিদ্রোহ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে  বিদ্রোহের চেতনা  ভারতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়ে যায়। এইটিই  ছিল পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। যার ফলে

শত সহস্র  বছরের  এক রাজা বা সম্রাটের পর আরেক রাজার আবির্ভাব — এই পথচলার রীতি  সমাপ্তি  হয় । শুরু হয় গনমানুষের দায়িত্ব ও  রাজনৈতিক  সংস্কার । যেই সংস্কারের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে ভারত -পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র বৃটিশ শাসন বা রাজার শাসন  থেকে রিপাবলিক হিসাবে প্রথম  স্বাধীনতা পায়। জাতীয়তাবাদের  এই চলমান চেতনায় ১৯৭১ সালে আবার শহীদানের   আত্মত্যাগে  বাংলাদেশের জন্ম হয়।   ২০২৪ সালে জুলাই -আগষ্টে  স্বৈরশাসনের  বিরুদ্ধে   ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফলে একক ব্যাক্তি বা পরিবারের    অন্ধ আনুগত্য  পরিহার করে জনগন   মুক্ত আঙ্গিকে পথচলার স্বপ্ন দেখছে । যদিও কোন পথই শেষ পথ  নয়। কারন  “Man is born free, but everywhere he is in chains” due to constraints  of the society and political structures.

While humans are naturally free in a state of nature, they are subsequently subjected to various forms of dependence and domination when they enter into civil society. which represent societal structures, laws, and norms that limit individual liberty and autonomy.  অর্থাৎ মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলে আবদ্ধ” কারণ সমাজ এবং রাজনৈতিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতার জন্য।

মানুষ প্রাকৃতিকভাবে স্বাধীন হলেও, পরবর্তীতে যখন তারা নাগরিক সমাজে প্রবেশ করে তখন তাকে বিভিন্ন ধরণের নির্ভরতা এবং আধিপত্যের শিকার হতে হয়। যা সামাজিক কাঠামো, আইন এবং নিয়মের প্রতিনিধিত্ব করে,যা ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনকেও সীমাবদ্ধ করে। এই গুলি যখন সমন্বয়হীনতা হারিয়ে ফেলে তখন সমাজ বা রাষ্ট্রে বিদ্রোহ বা আন্দোলন হয়। যা যুগযুগে বা শতাব্দীতে শতাব্দীতে হবে যা স্বাভাবিক।

পরিশেষে একটি কথা উল্লেখ করছি, আমেরিকারন টমাস জেফারসন, জর্জ ওয়াশিংটন,স্যামুয়েল অ্যাডামস, প্যাট্রিক হেনরি এবং  ফ্রান্সের রুশোর কথা স্মরণ করলেও ভারতে সিপাহি বিদ্রোহের শহীদ  আত্মত্যাগীদের  নাম তেমনটা আলোচিত হয় না।  ভারতের সিপাহি বিদ্রোহের নেতা সিপাহী মঙ্গল পান্ডে যাকে প্রকাশ্যে সর্ব প্রথম ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা  হয়েছিল, সে অথবা তার মত অসংখ্য  আত্মত্যাগীর কথা খুব একটা মনে করা হয় না যা দু:খজনক।

লেখকঃ ড. মুহম্মদ ইদ্রিছ ভূইয়া 

এডভোকেট সূপ্রীম কোর্ট, এডিবি ও  ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের 

 সাবেক কনসালটেন্ট ও সাবেক নেতা।