
অনলাইন ডেস্কঃ জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও এখনো গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের মধ্যে কোনো ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও সেগুলোর বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১১ সপ্তাহ পর কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেলেও সেগুলো এখনও ফিলিস্তিন অংশেই আটকে আছে বলে জানায় জাতিসঙ্ঘ। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার ৯৩টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যাতে ছিল আটা, শিশু খাদ্য ও ওষুধ। তবে জাতিসঙ্ঘ বলছে, এসব সরবরাহ এখনো বিতরণ করা যায়নি।
জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “আমাদের দল ইসরাইলের অনুমতির জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা আমাদের গুদামে ত্রাণ আনতে সক্ষম হয়নি।” তিনি জানান, ইসরাইল জাতিসঙ্ঘকে নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা গাজা উপত্যকার ভেতরে ঢুকে সরবরাহ গুদামে নিয়ে গিয়ে সেগুলো নতুন করে আবার লোড করে। এই শর্তের কারণে ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে।
ডুজারিক এ পরিস্থিতিকে “প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রে একটি ফোঁটা” হিসেবে উল্লেখ করেন। জাতিসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী, গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলায় প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রয়োজন।
এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার গাজায় ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযানকে “অসহনীয়” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস জানিয়েছেন, ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তারা তাদের বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করবে।
গাজায় খাদ্য সংকট ও শিশুমৃত্যুর আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, “আমরা যদি দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে না পারি, তাহলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।” যদিও এই পরিসংখ্যানের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয় (UNOCHA) জানিয়েছে, তারা গাজায় তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এমন আনুমানিক ১৪ হাজার শিশুকে জরুরি সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে। এই তথ্যের ভিত্তি হিসেবে তারা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC)-এর একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ১৪ হাজার ১০০ শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার হতে পারে।
UNOCHA-র মুখপাত্র জেন্স লারকে জানান, “আমরা এমন কিছু শিশুর কথা জানি যাদের এখনই জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সাপ্লিমেন্ট দরকার, কারণ তাদের মায়েরা তাদের খাওয়াতে পারছে না।”
গাজায় খাদ্য ও ওষুধের অভাবে মানবিক বিপর্যয় দ্রুত ঘনিয়ে আসছে, এবং পরিস্থিতির অবনতিতে জাতিসঙ্ঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। গত সপ্তাহে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অপুষ্টির কারণে ইতোমধ্যেই অন্তত ৫৭ জন শিশু মারা গেছে।