কূটনীতি আবেগ নয়, কৌশল- জনতার চিন্তা

33

তাবৎ দুনিয়ার আর কোথাও মার্কিন সৈন্য যায়নি! আমেরিকার পরে তারা কেবল কক্সবাজারে পা রেখেছে! এরপর তারা সেন্ট মার্টিনে যাবে এবং ফিশ পুড়িয়ে খাবে! অবশ্য আমি যে-বার বারবিকিউ খেলাম, সেবার ব্যাপক ডায়রিয়া হয়েছিল! ডায়েরিতে সে কাহিনি লিখে রেখেছি! মার্কিনিরা চায়নি—আর সেটা হয়েছে—স্মরণকালের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই! শক্তিধরকে কীভাবে বন্ধুর তালিকায় রাখা যায়, সেটাই আধুনিক কূটনীতি।

অহেতুক ভারতবিরোধিতার নামে বাংলাদেশে যা হচ্ছে, সেটাও এলার্মিং। আবেগে ভারতকে বর্জন করা যায়, কিন্তু পলিটিক্যাল ভারতকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। ভারতবিরোধিতা করে ফেসবুকে বাহবা পাওয়া যায়, কিন্তু পেঁয়াজ–কাঁচামরিচ ভারত থেকে না এলে মুশকিল আছে। ক্রেতা জনতা তখন সরকারকে বাজারে চিবিয়ে খাবে। চিনি না দিলে চা মিষ্টি হবে না! আজ না কি চা দিবস গেলো!

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পোর্ট নিয়ে এখন অনেক দেশপ্রেম দেখা যাবে! রাজনীতি সবসময় স্বার্থবাদী কথা বলে। অথচ মাল খালাসে, মাল লোডিংয়ে কত রকম নয়–ছয় হয়, তা ভুক্তভোগী জানে। পোর্ট বিদেশিদের হাতে গেলে এখনকার চেয়ে একশোগুণ বেশি শৃঙ্খলায় চলবে। তবে সমস্যা হচ্ছে, অনেকের ধান্ধাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। “মানি না, মানবো না।” পদ্মা সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা প্রজেক্ট—সব তো দেশপ্রেমিক বাঙালি ভালোবেসে করেছে! বিদেশি নাগরিক এখানে এসেছিল নাকি?—ভুলে গেছি।

মানবিক করিডোর চেয়েছে আমেরিকা ও জাতিসংঘ। না দিয়ে পারবে—এমনটা কোনো বাপের সাধ্য নেই। কোনো এক সরকার বলেছিল, “মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ওপারে যাব না!” পিটার হাস ফ্রাই করে খেয়েছিল রসের বক্তৃতায়! কোটার মতো সামান্য ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন দিয়ে শুরু করে একটি প্রতাপশালী সরকারের কী দশা হয়েছে, তা দুনিয়া দেখেছে। আটলান্টিকের ওপারের ঢেউয়ের তেজে সারা দুনিয়া কাঁপে।

নির্বাচিত সরকারের হাত দিয়ে হোক, আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিক—মানবিক করিডোর না দিয়ে কারও রক্ষা নেই! এখানে বাংলাদেশ কোনো ইস্যুই না। খেলা মূলত ভারত–চীন–আমেরিকা—ত্রিমুখী। বলি হচ্ছে মিয়ানমার, আর ট্যাকটিকালি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এই খেলা আজকের না। মামলা বহুত পুরানা। ফাইলের ধুলা সবে ঝাড়া হয়েছে! জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে প্রতি বছর কত সৈন্য যেন যায়?

কাজেই, দেশের জন্য কী কী পাওয়া যায়—সেটাই বার্গেইনিং ইস্যু হওয়া উচিত। আমেরিকা কী করতে পারে, তা মধ্যপ্রাচ্য দেখে শেখা উচিত। শক্তিধরের শত্রু না হয়ে বন্ধু হওয়াই ভালো। অন্তত তাতে বুদ্ধির কিছু ছাপ থাকে। আমেরিকা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সৃষ্টির বাপ। ট্রাম্প কোনো যুদ্ধ চায় না, অথচ তার প্রধান প্রোডাক্ট—অস্ত্র। ব্যবসা ভালো চলছে। যারা যুদ্ধবিরোধী, সেইসব দেশই সবচেয়ে বেশি ডলারে কিনছে।

গোটা বিশ্ব পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে। বাংলাদেশ ফেরেশতাদের আবাসস্থল নয় যে এখানে ভিন্ন কিছু ঘটবে। রোজকার চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই ভালো কিছু অর্জন করতে হবে। নিজেরা কামড়াকামড়ি জারি রাখলে কারও রক্ষা নেই।

আখ চুরির গল্পে চোরের পরিণতি জানেন তো? আমেরিকা বিশ্বব্যাপী সেই পলিসি পালন করে।

এস এম মোকতার হোসেন