এসএম মোকতার হোসেনঃ মুসলমানদের দু’টি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ২য় বৃহত্তম উৎসব হচ্ছে ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানির ঈদ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমাদের সামনে হাজির হয়েছে এই কোরবানির ঈদ। ধর্মীয় দিক দিয়ে এই কোরবানির ঈদ যে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কোরবানি আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর নামে পশু জবেহ করা। আপন জান-মাল অপেক্ষা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মূল্য অনেক বেশি, কোরবানি আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। আর সেজন্যই প্রতি বছর কোরবানির ঈদে মুসলমানেরা আল্লাহর প্রেম, আল্লাহর ভয় এবং তার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের আশায় বনের পশু কোরবানি করে থাকেন। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ আল্লাহর প্রতি এই মনের প্রকাশ না ঘটিয়ে সমাজে ভাবের প্রকাশ ঘটাতে কোরবানি দিয়ে থাকেন।
যা কখনো ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। কেননা হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদের শরীর ও চেহারা সুরতের দিকে লক্ষ্য করেন না। তিনি লক্ষ্য করেন তোমাদের অন্তর এবং তোমাদের আমলের দিকে।’ আর সেজন্যই আমাদেরকে বনের পশুর থাকা পশুত্বভাব দূর করতে হবে।
কোরবানি আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ) এর অতুলনীয় সৃষ্টি বহন করে। তাদের ঘটনা আমাদের এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে কোরবানি করার মন-মানসিকতা নিয়েই আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করতে হবে। কেননা কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগ ও উৎসর্গের দ্বারা খুব সহজেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
এর দ্বারা আল্লাহপাক মানুষের আন্তরিকতা যাচাই করেন। অথচ আল্লাহ প্রেম ভুলে গিয়ে কোরবানি ঈদ আসলেই আমাদের সমাজে শুরু হয় রীতিমত একটি প্রতিযোগীতা। আর তা হচ্ছে কে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে পশু ক্রয় করছে, কার পশু কত বড়, কত মোটা, কত সুন্দর। এসব তো আল্লাহপাক দেখেন না বরং তিনি দেখতে চান কার অন্তরে কতটুকু তাকওয়া বা পরহেজগারি আছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে, ‘কখনোই আল্লাহর কাছে পৌছায় না এগুলোর গোশত অথবা রক্ত বরং পৌছায় তোমাদের তাকওয়া (সূরা হজ্জ, আয়াত ১৩৭০)।’ তাই আসুন আমরা কোরবানির মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করি। আল্লাহপাক আমাদেরকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দান করুন। সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।