হাদিসে আছে কৃপণ ব্যক্তি খোদা হইতে দুরে, লোকসমাজে ঘৃণিত ও দোজখের নিকটবর্তী।
আবার অপব্যয় মারাত্মক ব্যাধি।
মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আয় ও ব্যয়। জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য আয় অনুযায়ী ব্যয় করা যেমন প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন অপচয় ও অপব্যবহার রোধ করা । আর বুঝতে হবে
মিতব্যয়িতা কৃপনতা নয়। অপব্যয় দেশ ও জাতির মারাত্মক ব্যাধি। ত্যাগের উৎসবের এই দিনকে সামনে রেখে মানব চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোচনা করছি এই নিবন্ধে। অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে মানুষের সঞ্চয়ী মনোবৃত্তি দুভাবে প্রকাশ পায়। একটি কার্পণ্য এবং অপরটি মিতব্যায়িতা। আপাতদৃষ্টিতে উভয় ক্ষেত্রে ব্যয়ের ব্যাপারে কাছাকাছি মনে হলেও এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। কার্পণ্যের মধ্যে থাকে সংকীর্ণতা আর মিতব্যয়িতার মধ্যে থাকে সংযম ও বিবেচনাবোধ।
মানুষকে অর্থ সম্পদ ব্যয় করার বিষয়ে বিবেচনা প্রসূতন হওয়া আবশ্যক। বিবেচনা শক্তি একটি আল্লাহর নেয়ামত বা মহাগুন। যেহেতু সৎপথে সম্পদ অর্জন করা কঠিন তাই ব্যয়ের ব্যাপারেও মানুষকে নিবিড়ভাবে ভাবতে হয়। অনেকে অর্থ ব্যয় করতে মোটেই ইচ্ছুক থাকে না। কিভাবে অর্থ ব্যয় না করে চলা যায় সেদিকেই সব সময় নজর থাকে। এই লোকেরাই সমাজে কৃপণ বলে পরিচিতি পান। মনে রাখতে হবে অর্থ ব্যয়ে অনিচ্ছা যেমন কার্পণ্য, তেমনই অর্থ ব্যয় করার সময় প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগিতার সু-বিবেচনা করা মিতব্যয়িতার অন্যতম গুনাবলী।
এতে পরিমিত ব্যয়ের মধ্যে অর্থের সদ্ব্যবহার হয়ে থাকে।
কার্পণ্য ও মিতব্যয়িতা অর্থব্যয় সংক্রান্ত হলেও তা এক নয়। উভয়ের মধ্যে মিল নেই, বরং বিপরীত মুখী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কৃপণতায় থাকে মনের সংকীর্ণতা। তাই কৃপণের ধন উপকারে আসে না। শুধু সঞ্চয় করে রাখার মধ্যে সম্পদ সংগ্রহের সার্থকতা নেই। বরং মিতব্যয়িতার মাধ্যমে অর্থ ব্যয় করা হলো সর্বোত্তম পন্থা।
মিতব্যয়িতা অর্থ প্রয়োজন মতো অথবা হিসাব করে ব্যয় করা। আবার পরিমিত ব্যয় বা আয় বুঝে ব্যয় করার স্বভাবও মিতব্যয়িতা। মিতব্যয়িতার বিপরীত শব্দ অমিতব্যয়িতা বা বে-হিসাবী। একজন ব্যক্তি অপব্যয়ের মাধ্যমে যখন অর্থ ব্যয় করে তখন তাকে অমিতব্যয়ী বলা হয়। অপর দিকে অতিমিতব্যয়িতাকে বে-হিসাবি এবং কৃপণতা বা কার্পণ্যের সমার্থক বলা হয়। একজন কৃপণ ব্যক্তি প্রয়োজন মতো অর্থ ব্যয় হতে নিজেকে দূরে রাখে।
মিতব্যয়িতা একটি নেয়ামত। মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে সবাই পছন্দ করে। মিতব্যয়ী ব্যক্তি দেশ ও সমাজের কাছে উত্তম ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। এই গুনের জন্য জীবনে চলার পথে মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে খুব কমই অর্থ সঙ্কটের মুখাপেক্ষী হতে হয়। মিতব্যয়ী ব্যক্তির সংসার জীবন সচরাচর সুখময় হয়ে থাকে। অন্যদিকে অমিতব্যয়ী ব্যক্তি অর্থ সঙ্কটে পড়লে অনেকটা দিশেহারা হয়ে যায়।
আমাদের বেছে নিতে হবে আমরা কৃপণ হবো না দানশীল হবে। কেননা একসাথে কখনোই আমরা দুটো হতে পারব না।
দয়াময়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন কার্পণ্যতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার বরকতময় পথে আমাদের পরিচালিত করেন।
হাদিসে আছে কৃপণ ব্যক্তি খোদা হইতে দুরে, লোকসমাজে ঘৃণিত ও দোজখের নিকটবর্তী।
আবার অপব্যয় মারাত্মক ব্যাধি।
হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন কৃপণতা হলো সকল খারাপ অভ্যাস গুলোর একটি সম্মিলিত রূপ। আর এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষ যেকোন অন্যায়ের দিকে ধাবিত হয়।
অথচ বাংলাদেশে মানব সমাজে অপচয় ও অপব্যয় অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর প্রভাব ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রভাবিত হচ্ছে।
জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে এই দূরারোগ্য ব্যাধি দূর করা প্রয়োজন। জীবন ধারনের জন্য অর্থ প্রয়োজনীয় উপার্জন এবং সম্পদ ভোগকরার অনুমতি ও নিদের্শ প্রত্যেক ধর্ম ও সভ্যতায় রয়েছে। যা সুন্দর ভাবে
সন্নিবেশিত হয়েছে ইসলামে।
ইসলাম মিতব্যায়িতায় থেকে একদিকে যেমন হালার উপায়ে অর্থ উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছে। অপরদিকে হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থ সম্পদ হালাল পথ ও পদ্ধতিতে ব্যয় করারও নির্দেশ দিয়েছে।
অতঃপর অপব্যয়, কৃপণতাসহ সমস্ত দোষ গুলিকে হারাম করতে হবে। ত্যাগ করার অঙ্গিকার ঘোষণা করতে হবে পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে।
লেখক : বীরমুক্তিযোদ্ধা ড.মুহম্মদ ইদ্রিছ ভূইয়া “মেসেজ অব ইসলাম’ গ্রন্থের প্রণেতা, আইনজীবী, এডিবি ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাবেক কনসালটেন্ট, গবেষক ও কলামিষ্ট।