৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

114
ছবি- সংগৃহীত
ছবি- সংগৃহীত

প্রধান প্রতিবেদকঃ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই বাজেট প্রস্তাব করেন।

বাজেট বক্তৃতার শুরুতে তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, “বিগত সরকারের রেখে যাওয়া বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানো এবং জনজীবনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কঠিন দায়িত্ব নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে।”

বাজেটের মূল দিকনির্দেশনা:

  • মোট বাজেটের আকার: ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
  • পরিচালন ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ: ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
  • এডিপি (উন্নয়ন কর্মসূচি): ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
  • রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা: ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৯%)।
    • এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা।
    • অন্যান্য উৎস: ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
  • ঘাটতি বাজেট: ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।
    • বৈদেশিক ঋণ থেকে সংগ্রহ: ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা (নিট ৯৬ হাজার কোটি)।
    • অভ্যন্তরীণ ঋণ: ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা (ব্যাংক: ১ লাখ ৪ হাজার কোটি)।
    • সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য: ১২,৫০০ কোটি টাকা।

ঋণের সুদ পরিশোধ:

  • মোট: ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
    • অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ: ১ লাখ কোটি টাকা।
    • বৈদেশিক ঋণের সুদ: ২২ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

এই বাজেট পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। অর্থ উপদেষ্টা জানান, এবার প্রথমবারের মতো প্রবৃদ্ধি-নির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে মানুষের মৌলিক চাহিদা, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং সুশাসনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও চ্যালেঞ্জ:

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমলেও এখনো তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু হওয়ার পরবর্তী সম্ভাব্য প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি পরিবর্তনের দিকেও নজর রাখার কথা বলেন উপদেষ্টা।

কর-শুল্ক পরিবর্তনের ফলে পণ্যের দাম:

  • কমতে পারে: চিনি, ইনসুলিন, ক্যানসারের ওষুধ, দেশি ই-বাইক, কাগজের প্লেট, বড় মনিটর, উড়োজাহাজ ভাড়া, আইসক্রিম ইত্যাদি।
  • বাড়তে পারে: সিগারেট, রড, প্রসাধনী, এলপিজি, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ফোন, ওটিটি কনটেন্ট, হেলিকপ্টার সার্ভিস, বলপয়েন্ট কলম, ফ্ল্যাট, খেলনা, সাবান, ম্যানমেড ফাইবার, লিফট ইত্যাদি।

যুব উন্নয়ন:

প্রথমবারের মতো যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান বাড়াতে যুব ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর চেয়ে এখন অর্থনীতির ভিত শক্ত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনীতিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য, যা আগামীর বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি হবে।”

এই বাজেট জনকল্যাণে কেন্দ্রীভূত একটি রূপরেখা, যেখানে ব্যক্তি ও সমাজের মৌলিক চাহিদা, অর্থনৈতিক ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সূত্রঃ বাসস