ভালোবাসা: অহমিকার দেয়াল ডিঙিয়ে ফিরে আসা জীবন

20
অন্যের সঙ্গে তুলনা করে, কিংবা কুবুদ্ধি ফেরি করে বেড়িয়ে কখনো ভালো থাকা যায় না। পরাজয়ের মধ্যেও প্রশান্তি থাকে—যদি তা হয় আপন মানুষের জন্য।

ইগোর কারণে হারিয়ে যায় প্রেম, অথচ ঘৃণার চেয়ে ভালোবাসা অনেক বেশি সংক্রামক। “আমিই ঠিক”—এই এক ভয়ংকর আত্মতুষ্টি-রোগে আজ প্রত্যেক মানুষ জ্যান্ত এক অসুখ। অথচ প্রত্যেকেই হতে পারত অপরের ওষুধ, অপরের শান্তির আশ্রয়।

“সে সেধে কথা বলুক, সে ‘সরি’ বলুক”—এই জেদ, এই অবিচারেই জীবনের অস্তপারের রঙ গাঢ় হয়ে আসে। যখন হাতে ওঠে ট্যাবলেট আর ক্যাপসুল, তখন আয়ুই তো জীবনকে ধোঁকা দেয়। ততদিনে ভালোবাসা সংকীর্ণ হয়ে আসে, বেঁচে থাকার চেষ্টা হয়ে পড়ে আত্মরক্ষার শেষ প্রয়াস।

মান-অভিমান যেন ইস্পাতের দেয়াল না হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের প্রতিটি বয়সের আছে আলাদা রঙ, আলাদা রস। যার দোষেই হোক, ক্ষতি ও খেসারত দুজনেরই। একদিন অতীতে ফিরে তাকিয়ে আফসোস হবে—আরেকটু ছাড় দিলে, আরেকটু সহনশীল হলে জীবনটা হয়তো আরও সুন্দর হতে পারত। পাছে পড়ে থাকত কয়েকটি কোমল স্মৃতি।

আত্মঅহমিকায় আমরা হারিয়ে ফেলি সব। আশা করি সে আগে কথা বলুক, সে আমার দাবি মেনে নিক, কিংবা সে অবনত হোক—এই সব শর্তের দেয়ালেই টিকে থাকে অশান্তি। বিপক্ষও যদি এমন করে, তবে শান্তি কোথায়? হয়তো শুধু পরপারে! সম্পর্কের দূরত্ব মানে শুধু দুজনের ক্ষতি নয়—যারা আমাদের ঘিরে আছে, তাদের মানসিক শান্তিও হয় বিষাক্ত।

সুসময় খুবই অল্প। সে সময়টুকু গল্পে ভরা যায়, মুগ্ধতা বিছিয়ে বাঁচা যায়। চেহারায় চেয়ে থেকে দেখা যায় স্বপ্ন, কিংবা বহুদূর থেকেও অনুভব করা যায় কারও উপস্থিতি। অবহেলা কিংবা অবজ্ঞা নয়—সম্পর্ক বাঁচে যত্নে। সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয় ত্যাগে।

অন্যের সঙ্গে তুলনা করে, কিংবা কুবুদ্ধি ফেরি করে বেড়িয়ে কখনো ভালো থাকা যায় না। পরাজয়ের মধ্যেও প্রশান্তি থাকে—যদি তা হয় আপন মানুষের জন্য।

অপেক্ষাকে রূপ দিতে হয় প্রতীক্ষায়। উপেক্ষাকে অবহেলায় পরিণত করতে না পারলে ভালো থাকা কঠিন। মন বুঝলে মানুষকে চেনা যায়। বিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে না পারলে সম্পর্কের ভিত্তি ভেঙে পড়ে। যত্নে গড়া বন্ধনের গাঁথুনি হয় দৃঢ়।

শুধু কল্পনায় নয়, বাস্তবতা বোঝাও জরুরি। কোনো মানুষের কাছে তার সামর্থ্যের বাইরে প্রত্যাশা করলে, দুঃখ তখন অবধারিত। ত্যাগের মহিমায় ভালোবাসাকে রঙিন করা যায়।

ভালোবাসি ভালোবাসা—এই হোক জীবনের মন্ত্র।

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।