আমার দুইজন প্রিয় হুমায়ুন

22
ছবি- সংগৃহীত
ছবি- সংগৃহীত

তখনকার সময় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে একটি হাট বসতো। হাটের নাম ছিল “তিপ্রা বাজার”। নানার বাড়ী শাকতলা গ্রামে গেলে, নানা নানি,মামা -মামীরা যে কি আদর করতেন সেই স্মৃতি মনে হলে চোখের পানি সম্ভ্রম করতে পারিনা।

আমার বয়সে চার বছরের ছোট খালাতো ভাই (সাবেক ছাত্র নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ- ডাকসু’র সদস্য) হুমায়ুন মাহমুদকে নিয়ে নানার সাথে কখনো জাফরগঞ্জ কখনো কংশনগর, কখনো ময়নামতি তিপ্রা বাজারে যেতাম।

যেহেতু নানা কুমিল্লার নোয়াব ফারুকের জমিদারী সেরেস্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাই তিনি বৃহত্তর ত্রিপুরা জুরে উপজাতি আধিবাসীদের সাথেও পরিচিত ছিলেন। তাই ত্রিপুরার ত্রিপুরী বা তিপ্রা উপজাতীয়দের ভাষা ককবরকে নানা কিছু কিছু কথাও বলতে পারতেন।

আমার মনে আছে একদিন ময়নামতি তিপ্রা বাজারে একজন পাহাড়ি তিপ্রা মহিলার সাজানো দোকানে ডেওয়া এবং কলান কিনতে গিয়ে ওদের সাথে বাংলার পাশাপাশি ককবরক ভাষায় কথা বললেন নানা “বোয়াং বাহাই ডং” যার অর্থ তোমরা কেমন আছো। মহিলা উত্তরে বললো ‘আং কাহাম’ অর্থাৎ আমি ভালো আছি। এই বাক্যটি নানার বাড়ি আসতে পথে পথে মুখস্ত করেছিলাম, যা আজো ভূলি নাই।

তিপ্রা সম্প্রদায়ের মানুষের কথা মনে হলে সেই বাক্যটি আমার মনে এখনো জেগে উঠে। জেগে উঠে আমার সুন্দর ফুরফুরে স্নেহের খালাতো ভাই ‘হুমায়ুন মাহমুদে’র কথা। সে নানার বাড়ীতে বেড়াতে গেলে আমার পাশ ছাড়তো না। আমি চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ার সময় এক বছর নানার বাড়ীতে থেকে মাশিকারা স্কুলে পড়েছি।

আমার পিতা যখন বর্তমান নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ সার্কেলে চাকরি করতেন। তখন থানার খুব নিকটেই ছিল নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক ‘হুমায়ুন আহম্মদে’র নানার বাড়ি। তখনকার সময়ে মোহনগঞ্জ প্রাইলট স্কুল ছিল দেশের নামীদামী স্কুল। শিক্ষা সম্প্রসারন কর্মসূচীর আওতায় শিকাগো থেকে আসা দুইজন আমেরিকান শিক্ষকও শিক্ষকতা করতেন এই স্কুলে। আমি সপ্তম থেকে নবম শ্রেমী পর্যন্ত পড়েছি সেই স্কুলে।

সেখানে লেখা পড়ার কারণে আমার ছোট বেলা থেকে হুমায়ুন আহমেদ ও তার নানা এবং সকল মামাদের এর মধ্যে তার তৃতীয় মামা শেখ রুহুল আমিনের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশী। সে মোংলা পোর্টের চীফ ইঞ্জিনিয়ার পদ থেকে রিটায়ার্ড হয়ে অবসর জীবনযাপনে আছে। আমি হুমায়ুন আহমেদের মামার বাড়িতে হর হামেশা যাতায়ত করতাম। ওর নানার নাম ছিল শেখ আবুল হোসেন। তিনিও আমার নানার মত হালকা পাতলা গড়নের ছিলেন হাতে আমার নানার মত লাঠি থাকতো। যেহেতু আমার নানা ও ‘শেখ’ তাই ওর নানা আমার সাথে ঠাট্টা করে আমাকে ‘তিপ্রা বলে ডাকতো। সেই থেকে তিপ্রা বা টিপরা শব্দটি আমায় ছেড়ে যাওয়া এই দুইজন প্রিয় হুমায়ুনের সাথে আমার হৃদয় জরিয়ে আছে।

লেখক-
বীরমুক্তিযোদ্ধা
ড.মুহম্মদ ইদ্রিছ ভূইয়া