ইরানের ফাঁপা হুমকি ও মুসলিম বিশ্বের চরম বাস্তবতা

50
ছবি-এএফপি
ছবি-এএফপি

গোটা মুসলিম বিশ্বকে বিপদে ফেলেছে ইরানের বাগাড়ম্বরপূর্ণ মিথ্যাচার। কী, মানতে পারছেন না? জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি—”ইরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে, ইসরায়েল ও আমেরিকাকে যেকোনো সময় ধ্বংস করে দেবে!” কিন্তু জোশ জাগানো ছাড়া বাস্তবে কিছুই করতে পারেনি তারা। বরং এক রাতেই তেহরানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল।

‘আগাম প্রতিরোধমূলক’ হামলার নামে ইসরায়েল যেটা করেছে, তা স্পষ্টত মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কিন্তু এখন কে কার মানবাধিকার রক্ষা করে? ইউক্রেনবাসী, কাশ্মীরি কিংবা ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার কে রক্ষা করে? পশ্চিমাদের খাঁচায় না ঢুকলে ধ্বংসই পরিণতি—এটাই এখন বাস্তবতা। মানবাধিকার এখন দুর্বলদের মানসিক সান্ত্বনার নামমাত্র স্লোগান।

ইরান এতদিন প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে শক্তি প্রদর্শনের অভিনয় করেছে। কিন্তু ইসরায়েলের বিমান হামলা ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে তারা। শীর্ষ সামরিক নেতাদের একজনও বেঁচে নেই। আহাম্মক না হলে কেউ পরমাণু স্থাপনা প্রকাশ্যে রাখে? ইরানের গোয়েন্দা বাহিনী না থাকাই ভালো ছিল। ছোটবেলায় বাংলায় ডাবিং করা এক ইরানি যুদ্ধচিত্রে তাদের বীরত্বপূর্ণ লড়াই দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, অথচ বাস্তবে প্রথম ধাক্কাতেই কুপোকাত!

চোখধাঁধানো হুমকির বাইরে তাদের আর কিছুই নেই। ফলস্বরূপ, তারা নিজেরাও মরছে, আর মুসলিম বিশ্বকেও বিপদে ফেলছে। এই দুর্দশায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’ত!’ এখন তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারে—ইরান তো শিয়া রাষ্ট্র, তারা মুসলিমই নয়! ধ্বংস হোক!

খোমেনির হুমকি কিংবা এরদোয়ানের সতর্কবার্তা হয়তো কিছু লোকের মধ্যে জোশ তৈরি করে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। মিসাইলের বিরুদ্ধে তসবির জিহাদ চলে না! যে ঈমান ফেরেশতাদের যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে আনত, সেই ঈমান এখন ইমরানের বংশধরদের মধ্যে নেই। দূর থেকে হুমকি দিয়ে টিকে থাকা যায় না, পরীক্ষায় পড়লে ফলাফল স্পষ্ট—ব্যর্থতা।

ফিলিস্তিনে যারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে, তারা এক অর্থে বেঁচে গেছে। বাকিরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে ক্ষুধায়, চিকিৎসার অভাবে। ইরানের মেরুদণ্ড আর সোজা থাকবে বলে মনে হয় না। যাদের যোদ্ধারা শত্রুপক্ষের ষড়যন্ত্র মাথায় না নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায়, তাদের দিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। আমরা ‘লং মার্চ ফর ফিলিস্তিন, লং মার্চ ফর ইরান’ বলেই জান্নাতের টিকিট কনফার্ম করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি।

সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজ্যগুলো আমেরিকার সুরে নাচছে। তারা দুম্বা পুড়িয়ে খায়, নায়িকা নিয়ে আনন্দ করে, বাজপাখি আর বাঘ পুষে রাখে। অথচ ফিলিস্তিনের শিশুরা খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করছে। কাল কেয়ামতে তাদের সাক্ষাৎ হবেই!

আমেরিকা, ইসরায়েল কিংবা রাশিয়া যত মানুষ হত্যা করুক—তা বৈধ! অথচ কেউ একজন বলেছিল, “ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে যুদ্ধ হবে না।” সেই বেহায়ার মুখ নেতানিয়াহু হয়তো পায়খানা বানিয়ে ব্যবহার করতো! এই চরম নাভিশ্বাসের পেছনে মূল দায় মুসলিম নেতাদের অন্তঃসারশূন্যতার। ভোগের পরিমাণ কমিয়ে সামরিক শক্তি বাড়ালে এই অবস্থা হতো না।

মুসলিমদের রক্তে এখন দুনিয়াজুড়ে নহর বইছে। আল্লাহ নিশ্চয় দেখছেন। তবে তিনি মিথ্যাচারেরও বিচার করবেন। নগর জ্বললে কোনো দেবালয় রক্ষা পায় না।

এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একেকজন খোমেনি বা এরদোয়ান সেজে জাগরণী বাণী দিচ্ছে। অথচ বাস্তবে ইরান-ফিলিস্তিনে কবর খোঁড়ার লোকই পাওয়া যাচ্ছে না! কেউ রক্ষা পাবে না, কেউই না। মধ্যপ্রাচ্যের যারা আজ চুপ, কাল তাদের পরিণতিও একই হবে। ইতিহাস বিস্মৃত জাতি উৎসব করে গৌরব খোঁজে। যারা তলোয়ার বিক্রি করে তসবি কিনেছে, তারা আল্লাহর রহম পাবে—এটা ভাবা বিভ্রান্তি। এই যুগে তলোয়ার নয়, ট্যাংক ও মিসাইল কেনার সময়। অথচ তেল বিক্রির অর্থ ব্যয় হচ্ছে ভোগে— বিলাসবহুল দ্রব্য, আকর্ষণীয় খাদ্য, চিত্তার্ষক নারী ও বিলাসে। মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশাহরা এখন সোনার তৈরি কমোড ব্যবহার করেন!

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

raju69alive@gmail.com