কক্সবাজারে সমুদ্রভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে ঝাউবন

101
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

আসিফ ইকবাল নুর কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার প্রতি বছরই ভাঙনের মুখে পড়ছে। চলতি বছরের বর্ষার শুরুতেই সৈকতের প্রাকৃতিক সবুজ বেষ্টনী ঝাউবন ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত অন্তত ২০টি স্থানে উপকূল ভাঙন দেখা গেছে, যেখানে ঝাউগাছসহ সৈকতের বড় অংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।

জিও ব্যাগ ব্যবহার করেও এ ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। গত মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলের ১২০ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন শুরু হয়। পর্যটকদের জনপ্রিয় স্থান যেমন ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টেও ভাঙনের প্রভাব পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ তৈরির মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধান দেখা যায়নি।

শহরের পাশাপাশি হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্টেও ভাঙনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। লাবণী পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত সৈকতের পাশে জিও ব্যাগ দিয়ে উঁচু বাঁধ তৈরি করা হলেও অতিরিক্ত জোয়ারের ঢেউয়ে তা কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ফলে ঝাউগাছ উপড়ে পড়ছে ও সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

বিচ কর্মীদের এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর বর্ষা শুরুর দিকেই লাবণী পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত বড় ধরনের ভাঙন দেখা গেছে। নাগরিক সমাজ বলছে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং পর্যটনের চাপে সৈকতের প্রাকৃতিক গঠন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঝাউগাছের আগেই যে প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর থাকা উচিত ছিল, তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ঝাউবনও আর টিকে থাকছে না।

দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৭২ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত সময়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ঝাউগাছ রোপণ করা হলেও এর প্রায় অর্ধেকই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ইনানী, হোয়াইক্যং ও টেকনাফ এলাকার ঝাউবাগানও হুমকির মুখে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক জানান, সৈকতের প্রাকৃতিক জৈব প্রতিরোধব্যবস্থা (বায়োশিল্ড) ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণেই বালিয়াড়ি টিকছে না। সাধারণভাবে উপকূলীয় এলাকায় তিন স্তরের উদ্ভিদশ্রেণি থাকে—সাগরলতা, গুল্ম এবং ঝাউজাতীয় গাছ। কক্সবাজারে শুরুতেই শুধু ঝাউগাছ লাগানোয় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।

ভবিষ্যতে উপকূল রক্ষায় ৬৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে কলাতলী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি পরিবেশ ও পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।