কাজী মোহাম্মদ ইয়াসীন আরাফাত খুলনা জেলা প্রতিনিধিঃ খুলনায় সম্প্রতি একের পর এক খুনের ঘটনা ও অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারে জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নদী ও খাল থেকে পাওয়া লাশগুলোর অধিকাংশের শরীর পচে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুলিশকে লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪৭ দিনে খুলনায় মোট ১৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৯টি লাশ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, নৌ-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চলছে। অভিযানে বেশ কিছু সন্ত্রাসী, সহযোগী এবং কিশোর গ্যাং সদস্য ধরা পড়লেও হত্যাকাণ্ড থামছে না।
সম্প্রতি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনায় খুলনার ভয়াবহ পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে:
- ৯ জুন: রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে কচুরিপানার মধ্যে এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়। লাশটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
- ৮ জুন: শ্রীফলতলার কলাবাগানে ভ্যানচালক রবিউল মোল্লার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়। ধারণা করা হচ্ছে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়।
- একই দিন, রূপসার আইচগাতিতে প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন জান্নাত গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন হন।
- ৪ জুন: মতিয়াখালী সুইচগেট খালে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ পরিচয় শনাক্তে ব্যর্থ হয়।
- ২ জুন: ময়লাপোতা এলাকায় ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার নিহত হন।
- ১০ ও ১১ মে: খানজাহান আলী ও হিরনের ঘাট এলাকা থেকে আরও দুটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়।
- ৭ মে: পারিবারিক কলহে জান্নাতি আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
- ২৩ মে: শিপইয়ার্ড এলাকায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়, যিনি পরে নাঈম মোল্লা বলে শনাক্ত হন।
- ২৬ মে: রূপসার মোছাব্বরপুরে গুলিতে কালো রনি ও একই রাতে ছুরিকাঘাতে সোনাডাঙ্গায় গোলাম নিহত হন।
- ১৭ মে: মীরেরডাঙ্গা থেকে ১৩ বছর বয়সী অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়।
- ২৯ মে: খালিশপুরের মাছ ঘাট এলাকা থেকে আরও একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়।
- ২৭ মে: কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আব্দুল মজিদের লাশ পাওয়া যায়।
- ২২ মে: টুটপাড়ায় নিলু বেগম নামে এক নারী খুন হন।
- ২৩ মে: পারিবারিক দ্বন্দ্বে রূপসায় আবদার শেখ খুন হন।
- ৩১ মে: কয়রায় বড় ভাই শহীদুল গাজী ছোট ভাইকে হত্যা করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা খোন্দকার হোসেন আহমদ জানিয়েছেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে এবং অধিকাংশ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শহরে নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা নজরদারি এবং জনসচেতনতামূলক সভা চালু রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এই ধারাবাহিক ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে, এবং নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি অপরাধ প্রতিরোধে আরও কার্যকর উদ্যোগের দাবি উঠেছে। সূত্রঃ ইউএনবি