
নিজস্ব সংবাদদাতা: একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। রাজউকের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন প্রকল্প সমূহে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন গেড়ে বসেছে। সংস্থাটির সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরেই দুর্নীতি ও ভয়াবহ অনিয়ম রয়েছে। আর এসব দুর্নীতির ক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত স্পষ্ট। ফলে, রাজউক কর্তৃক সার্বিক জবাবদিহি কাঠামো কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন ব্যহত হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার পাওয়া গেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্মচারী মো. হানিফ খন্দকারকে! যিনি সেন্ট্রাল মুভমেন্ট দপ্তর, উপ-পরিচালক এস্টেট ও ভূমি-২ শাখায় অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন। একজন সামান্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হানিফ খন্দকার, যাকে দেখলেই নির্দ্বিধায় মনে হবে সাচ্চা খাটি মুসলমান। মুখে দাঁড়ি মাথায় টুপি! সহজে যেকেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না যে তিনি অবৈধ-আয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, বানিজ্য করে এত সম্পদ অর্জন করেছেন। সামান্য কর্মচারী হয়েছে তো কী হয়েছে!? সে অঢেল ধনসম্পদের মালিক হয়েছে! হতেই তো পারে! এবং সেটা অনিয়ম-দুর্নীতি করে। শুধু অনিয়ম-দুর্নীতি বলা হচ্ছে কেন, আরও অনৈতিক কাজ যে সে করেনি বা করছে না, তাও কী আদৌ বলা সম্ভব? সহজে না। হয়তো বা সময় বলে দেবে আরও অনেক নানা অজানা কথা, ওঠে আসবে আরও ভেতর থেকে ভেতরের গল্প পর্যায়ক্রমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজউকের চাকরিতে যোগদানের পর হতে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশাল ধন-সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। এ যেন আলাদিনের চেরাগকেও হার মানায়! একজন সামান্য অফিস সহায়ক হয়ে কিভাবে এত সম্পত্তি অর্জন করেছেন তিনি!? সাধারণ জনমনে এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
হানিফ খন্দকারের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ: অফিস সহায়ক হানিফ খন্দকারের নিজ উপজেলা বাকেরগঞ্জে পৌরসভার ভিতর ১ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রুনসী ভিআইপির সামনের সড়কে ৮ শতাংশ জমির উপরে একটি চার তলা ভবন রয়েছে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় চারকোটি টাকা, যেটা তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। যার তথ্যচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় ১ নং ওয়ার্ডের রুনসীতে ২২ শতাংশ জমির উপরে একটি টিনশেড ভবন রয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুইকোটি টাকা।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সদর রোডে জনতা ব্যাংকের পাশের ৮ শতাংশের একটি প্লট রয়েছে যেখানে একটি টিনশেড ঘর রয়েছে এবং সদর রোডের পাশে দুটি দোকান ভাড়া দিয়ে রেখেছেন, যার বাজার মূল্য প্রায় তিনকোটি টাকা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে রুপাতলী হাউজিং স্টেট এর ভেতর আব্দুর রব সেরনিয়াবত স্কুলের বিপরীতে ৪ শতাংশ জমির উপরে একটি সুবিশাল ভবন আছে। পুরো ভবণটি তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন, উক্ত ভবনে ‘গ্রুপ চার এস’ এর অফিস অবস্থিত। উক্ত জমি ও ভবনের বর্তমান মূল্য প্রায় চারকোটি টাকা। এছাড়াও রাজউক কর্মচারী হানিফ খন্দকার’র বিরুদ্ধে নামে-বেনামে ঢাকা এবং তার জন্মস্থান বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নে অবৈধ আয়ে অঢেল সম্পত্তি অর্জনের ব্যাপক অভিযোগ আছে।
সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি: সংবাদ প্রকাশ করার স্বার্থে উক্ত বিষয় নিয়ে ৮-৯ জন অনুসন্ধানী সাংবাদিক রাজউকের অফিস সহায়ক মো. হানিফ খন্দকার’র কাছে সরাসরি গেলে তিনি সাংবাদিকদের বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে ‘জাহাঙ্গীর আলম’ নামে তার তথাকথিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য করজোড়ে অনুরোধ করেন। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে তিনি মোটা অংকের টাকা দিয়ে সাংবাদিকদের ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন। প্রমানস্বরুপ যার তথ্যচিত্র সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।
রাজউক ভবন থেকে সাংবাদিকরা চলে আসার পরে টাকা দিয়েও ‘ম্যানেজ’ না করতে পারায় হানিফ খন্দকার এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যে রীতিমতো বিভিন্ন লোকজন দিয়ে সাংবাদিকদের মুঠোফোনে, এমনকি লোক মারফতে হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেন। তারই প্রেক্ষিতে গত ২৯ মে ২০২৫ ইং তারিখে বিকেল ৪:৩০ মিনিটে 01751784989 এই নাম্বার থেকে দৈনিক লাখোকণ্ঠে কর্মরত অপরাধ অনুসন্ধানী প্রতিবেদক এম এস শবনম শাহীনকে তথাকথিত এই দুদক কর্মকর্তা মুঠোফোনে কল দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে তিনি সন্ত্রাসী সূলভ আচরণ করেন, কোনভাবে সংবাদ প্রকাশ হলে এই প্রতিবেদককে ‘দেখে নিবেন’ বলে প্রাণনাশের হুমকিও দেন।
রাজউকের অফিস সহায়ক মো. হানিফ খন্দকার কোনভাবেই যেন ক্ষান্ত হননি, নামধারী তথাকথিত কিছু নিজস্ব সাংবাদিক দিয়ে ফোন-কলে প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে চাপ সৃষ্টিসহ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ‘সেনাবাহিনী’ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। চারদিক থেকে হুমকি আসায় সাংবাদিকরা প্রাণনাশের আশংকা রয়েছেন যার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার স্বার্থে গত ১৬-০৬-২০২৫ ইং তারিখে রাজধানীর মতিঝিল থানায় রাজউক কর্মচারী মো. হানিফ খন্দকার’র বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জিডি নং: ১০৯৩, বর্তমানে উক্ত সাধারণ ডায়েরি’র তদন্ত নিয়ে কাজ করছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
প্রশ্ন উঠেছে একজন সাধারণ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে কীভাবে এত সম্পদ গড়েছেন তিনি? এত সম্পদ অর্জনের আয়ের উৎস কোথায়? একজন সরকারি সামান্য কর্মচারী হিসেবে দীর্ঘদিন একই পদে থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ জনমনে। তিনি কি নিয়ম অনুযায়ী তার সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন? দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে? এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানী পর্ব: ১, প্রতিবেদন চলমান থাকবে…