পয়সার পেছনে পতনের প্রতিচ্ছবি

58

মা-মাসির ছবি বিক্রি করেও যারা টাকা কামাতে চায়, তাদের বোধের কমতি নিয়ে কথা বলতেও লজ্জা লাগে। কাপল ব্লগের নামে যা-সব হচ্ছে মাখামাখি, লাগালাগি কিংবা হাবিজাবি—তা দেখে কাঁঠালপাতা খেয়ে বেড়ে ওঠা জীবের কথা মনে পড়ে!

মনিটাইজেশন থেকে কয়টা পয়সা পাওয়ার আশায় প্রজন্ম কী-সব ভিডিও করছে—আফসোস! না আছে শেখার কিছু, না আছে মান! বিনোদন যা আছে তাতেও মানসিক অসুস্থতা বেশি! মা-মাসির ছবি বিক্রি করেও যারা টাকা কামাতে চায়, তাদের বোধের কমতি নিয়ে কথা বলতেও লজ্জা লাগে। কাপল ব্লগের নামে যা-সব হচ্ছে মাখামাখি, লাগালাগি কিংবা হাবিজাবি—তা দেখে কাঁঠালপাতা খেয়ে বেড়ে ওঠা জীবের কথা মনে পড়ে! অথচ এই প্রজন্মকে নাকি বাপ-চাচারা হরলিকস খাইয়েছিল! বুদ্ধি বাড়ানোর সে টাকা বোধহয় জলেই গেল! লাজলজ্জার কোনো বালাই নাই। বড়ো-ছোটো বোধ নাই! নারী-পুরুষের গোপন ব্যাপারও আড়ালে নাই!

শর্টস রিলসে যা দেখায়, ওসবও মানুষে তৈরি করতে পারে? বেডরুমের গোপনীয়তা, শরীরের ভাঁজ-খাঁজ—কিছুই আর গোপন নাই। ভাষার যা শ্রী, তাতে ইসরাইলের থেকে দু’চারটা মিসাইল ঋণ করতে ইচ্ছা করে! মন ও শরীরকে সুড়সুড়ি দেওয়ার তাবৎ আয়োজন ভরে গেছে ইন্টারনেট! সামাজিক মাধ্যমে এখন সবচেয়ে বেশি অসামাজিক যোগাযোগ! স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বেশির ভাগ ছেলেমেয়েদের ‘ইয়ে’ আছে! নানা রঙের ছবি বিনিময় হয়। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে পার্কের কোণা-কাঞ্চিতে বসে! ফাঁক পেলে গোপনে শরীরে অভিসারও করে! এগুলো আপনার-আমার আসার ছেলে-মেয়েই তো!

উত্তরণের উপায়? পাহারা দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব? মনে হয় না। উৎস থেকে নিরুৎসাহিত করা না গেলে ভাইরাস সংক্রমিত হবেই। অসুস্থতা বাতাসের অগ্রে চলে। বয়স পাকার আগে শরীর পেকে গেলে, সেই সমাজের শৃঙ্খলা টিকবে না। শব্দের উচ্চারণে যদি জিহ্বা লজ্জা না পায়, তবে সে জাতি উচ্ছ্বসিত নয়—উচ্ছন্নে গেছে। কী দেখানো যায় আর কতটুকু গোপন রাখতে হয়, সে বোধ প্রজন্মকে দিতে হবে। কী বলা যায় আর কখন চুপ থাকতে হয়, তা না শেখালে ওরা শিখবে কোথায়? পরজন্ম কিংবা পরকাল বলতে একটা কিছু আছে। দায়িত্বশীলদের যেন কৈফিয়তের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হয়—সাবধান!

কিছু কিছু উৎস থেকে পয়সা কামাইয়ের চেয়ে ভিক্ষা করে খাওয়া সম্মানের। শরীর দেখিয়ে, বেহায়াপনা করে কিংবা নৈতিকতা বেচে টাকা কামানোর চেয়ে রক্ত বিক্রি করে অর্থ নেওয়া উত্তম। তাতে অন্তত সামাজিক মর্যাদা থাকে। দরকার হলে মানুষের কাছে হাত পাতো, তবুও সমাজ নষ্টের মসলা মেখো না। সম্পর্কের শৃঙ্খলা একবার ভেঙে গেলে, দ্বিতীয়বার তা আর জোড়া লাগবে না। তখন পারিবারিক বিকৃতি, রক্তের বিকৃতি সমাজে বিষবাষ্প ছড়াবে। বাঁচার দিনগুলোতে চিন্তার সুস্থতায় বাঁচার চেষ্টা করা খুব জরুরি।

রাষ্ট্রকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। কনটেন্টের নামে যে কনসেপ্টগুলো অসুস্থতা বহন করে, তা মূলে-শাখায় রুখে দিতে হবে। মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক, সামাজিকতার বৈপরীত্য এবং শৃঙ্খলার জন্য হুমকি—এমন যা কিছু, সেসবের আগ্রাসন থামাতেই হবে। প্রয়োজনে আইন হোক, শাস্তির বিধান হোক এবং সামাজিক সচেতনা সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রীয় আয়োজন হোক। নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ চিরায়ত। তা যদি মা-ছেলের সম্পর্ক, বাবা-মেয়ের বন্ধনকে অপবিত্র করে, তবে তার বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি। মানুষ মানুষ হোক। সুরুচিসম্মত সামাজিকতায় ভরে উঠুক চারপাশ। পয়সা সবসময় উপলক্ষ্য, সঠিক লক্ষ্য—এ সহজ সত্য আমরা যাতে বিস্মৃত না হই।

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

raju69alive@gmail.com