নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ তন্দ্রা মন্ডল, ফরিদপুরে মামলা দায়েরের পরও স্বামী ও শ্বশুরের হাতে মারপিট

172
হাসপাতালের বিছানায় নির্যাতিত তন্দ্রা মন্ডল। ছবি- সিএনএস
স্বামী প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ব্রিজের কাছে এক নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত ২৩ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের আদালতের আদেশ অমান্য করে গৃহবধূ তন্দ্রা মন্ডলকে মারধর করেছে তার স্বামী এবং শ্বশুর।

ভুক্তভোগী তন্দ্রা মন্ডল (২৪) সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামী প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের (২৭) (ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য) সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তার বিয়ে হয়। এরপর তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে, তিনি তার স্বামী থেকে আলাদা হয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। তন্দ্রা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী তার খোঁজখবর নেয় না এবং তার ভরণপোষণের দায়িত্বও পালন করেন না।

গত ২৩ জুন, ফরিদপুর জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলা নং- ২০০০(৩) এর ১১(ক) বিচারক তাদের সংসার জীবনে ফিরে আসার জন্য প্রদীপকে আদেশ দেন। বিচারকের আদেশ মেনে তন্দ্রার শাশুড়ি ও শ্বশুর তাকে বলেন, “তোমার পরীক্ষা শেষ হলে আমরা তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাব,” এই কথা বলে তারা তাকে পাঠিয়ে দেয়।

তবে ঘটনার দিন, তন্দ্রার পরীক্ষার পর তার স্বামী প্রদীপ তাকে নিতে মধুখালী আসেন। মধুখালী থেকে রওনা হওয়ার পর কামারখালী ব্রিজের কাছে এসে, তন্দ্রার স্বামী এবং শ্বশুর তাকে মারপিট শুরু করেন। তন্দ্রা বলেন, “প্রথমে আমার স্বামী আমাকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তারপর আমার বাম কাঁধে আঘাত করার পর আমি চিৎকার করতে থাকি।”

এসময় তার শশুর ও অন্যান্য সদস্যরা তাকে ধরে রাস্তায় ফেলে রাখে। তার স্বামী প্রদীপ তার তলপেটে জুতা দিয়ে আঘাত করে তাকে গুরুতর আহত করেন। তন্দ্রা চিৎকার করতে থাকলে পথচারীরা এগিয়ে আসেন, এবং নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়। পরে, তন্দ্রাকে উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কবির সর্দার জানান, “রুগী ভর্তি আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।”

তন্দ্রার বাবা দুলাল মন্ডল জানান, “এমন অনেক নির্যাতন আগেও হয়েছে। তবে আমি এখনো থানায় মামলা করতে পারিনি, কারণ আমি আমার মেয়েকে চিকিৎসা করানোর জন্য ব্যস্ত ছিলাম।”

এদিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে ০১৭২৮-৬৭৬২০৪ নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তার ফোনটি সুইচ অফ থাকায় কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তন্দ্রার পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।