রাষ্ট্ররক্ষায় এখন বিজ্ঞান শিক্ষা ফরজ

70

বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষা ধর্ম শিক্ষার মতোই ফরজ হয়ে উঠেছে। কারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত জাতিই পারে তাবৎ শত্রুর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়তে। এই বাস্তবতা ইরান প্রমাণ করেছে।

শত্রুর কাছে যদি প্রযুক্তির উৎকর্ষ থাকে, তবে তা মোকাবিলার একমাত্র উপায় হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চায় আধুনিক হওয়া। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নৈতিক করে তোলে—তবে নৈতিকতা দিয়ে মিসাইল প্রতিরোধ করা যায় না। হাজার মাইল দূর থেকে ছুটে আসা আঘাত প্রতিহত করতে হলে জাতিকে প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় সমরাস্ত্রে দক্ষ করে তুলতেই হবে।

আসর বসিয়ে বক্তৃতা দেওয়া, রাজনৈতিক কূটচাল কিংবা অর্থের জোগান—এসব সভ্যতার পুরনো পন্থা। এখন যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে। মুখোমুখি লড়াই নেই, দৃশ্যমান শত্রু নেই—শত্রু অদৃশ্য এবং আঘাত আসে দূর থেকে। তাই সময়ের দাবি মেটাতে আমাদের সন্তানদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করতে হবে।

রাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আজ বাসস্থানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু খাদ্য ও বস্ত্র নয়—এখন অস্ত্রকেও মৌলিক অধিকার হিসেবে ভাবা উচিত। নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে বাধ্যতামূলকভাবেই আত্মরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এসব সরঞ্জাম বিশ্ববাজার থেকে সংগ্রহ ব্যয়সাপেক্ষ। তাই নিজেদের দক্ষ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ গড়ে তুলতে হবে।

একইসঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার আধুনিকীকরণে এখনই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাস্তবতাই বলছে—সবাই সবার প্রতিযোগী

আধুনিক রাষ্ট্রপরিমণ্ডলে বন্ধুত্ব একটি বায়বীয় ধারণা মাত্র। কেউ কারো স্থায়ী মিত্র নয়—সবাই সবার প্রতিযোগী। তাই প্রতিবেশী হোক কিংবা দূরের রাষ্ট্র, সবাই থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে হলে চাই শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এবং সদা প্রস্তুত সেনাবাহিনী।

বর্তমান বিশ্বের যুদ্ধনীতি নির্মম ও পুঁজিকেন্দ্রিক। যারা যুদ্ধ বাধায়, তারাই অস্ত্র বিক্রি করে—শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ থামানোর ‘মধ্যস্থতাকারী’ও তারাই!

পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তির কারণে ভারতের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেয়েছে। ইরান আধুনিক সমর কৌশল ও প্রযুক্তির বদৌলতে ইসরাইল-আমেরিকার যৌথ আক্রমণেও আত্মরক্ষা করতে পেরেছে। অথচ সামরিকভাবে দুর্বল ফিলিস্তিন সেই সক্ষমতা না থাকায় আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট—শুধু ঈমানি দৃঢ়তা ও জজবা দিয়ে আধুনিক যুদ্ধ জেতা যায় না। প্রতিরোধ গড়তে হলে আধুনিক সমরাস্ত্র ও সামরিক কৌশলের পাশাপাশি চাই বিজ্ঞাননির্ভর প্রস্তুতি।

আমাদের সন্তানদের মক্তব ও মাদ্রাসায় পাঠিয়ে ধর্ম শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিজ্ঞান শিক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও জোরদার করতে হবে।

যে কৃষক মাঠে কাজ করে, যে শ্রমিক শহরে ইট গাঁথে—সংকটকালে তারাও দেশের সৈনিক হতে পারে। তাই বেসামরিক নাগরিকদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। আত্মরক্ষার মৌলিক জ্ঞান সবারই থাকা প্রয়োজন।

তরুণদের উন্নত ও আধুনিক শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে কাজে লাগাতে হবে।

ধর্ম, নৈতিকতা এবং দেশপ্রেম থেকে প্রজন্ম যেন বঞ্চিত না হয়—এ জন্য কারিকুলামে এসব বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য—অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সব বিষয় পড়ানো হয়, যার বাস্তব প্রয়োগ নেই। পক্ষান্তরে, পরমাণু শক্তি কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকেই ল্যাব-ভিত্তিক বিজ্ঞান শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আমাদের এখন প্রয়োজন মিসাইল বিজ্ঞানী, পরমাণু গবেষক ও আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিবিদ। এসব খাতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে।

বিশ্বব্যাপী সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে, বেড়েছে সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতা। এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে বিনা উসকানিতেই আক্রমণ করছে। দুর্বলদের ভাগ্যে কেবল ক্ষয়ক্ষতি।

যুদ্ধ এখন সম্পদ দখলের মাধ্যম। কাজেই এখনই সময় প্রস্তুতির, আত্মরক্ষার। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে হতে হবে বিজ্ঞানমনস্ক, আত্মবিশ্বাসী এবং সজ্জিত।

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

raju69alive@gmail.com