অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল – সময়োচিত উদ্যোগ, কার্যকর বাস্তবায়ন দরকার

41

বাংলাদেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে সাম্প্রতিক যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ হাজারেরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে—যার অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে কাগজপত্র যাচাইয়ে অসংগতির প্রমাণ ও অস্ত্র জমা না দেওয়ার প্রবণতা এ সিদ্ধান্তের পেছনে যৌক্তিক ভিত্তি তৈরি করেছে।

গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ৭ হাজারের বেশি অস্ত্র থানায় জমা পড়েনি। এর মধ্যে বহু লাইসেন্সধারী পলাতক কিংবা দেশের বাইরে চলে গেছেন। পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এবং তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা অধিকাংশ লাইসেন্সধারী। কেউ কেউ এই অস্ত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

যে পটভূমিতে এসব অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত, যা জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক বিবেচনায় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া যেমন অনৈতিক, তেমনি তা সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করে। এই অস্ত্রের অপব্যবহার ঠেকাতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত এসব অবৈধ অস্ত্র শনাক্ত করে তা দ্রুত উদ্ধার করা এবং যাঁরা আইন অমান্য করে জমা দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে রাজনৈতিক বিবেচনায় কেউ অস্ত্রের লাইসেন্স না পান, সে বিষয়েও নীতিমালায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

সবচেয়ে বড় কথা, অস্ত্রের লাইসেন্স ব্যবস্থাটি হওয়া উচিত পুরোপুরি স্বচ্ছ, আইনভিত্তিক এবং জননিরাপত্তার মানদণ্ড অনুযায়ী। না হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা আমাদের সমাজে সহিংসতা ও আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেবে।

দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে, এখনই কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা জরুরি। বর্তমান উদ্যোগ সেই শৃঙ্খলার প্রথম ধাপ, তবে সেটির সফল বাস্তবায়নেই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা।