শরীয়তপুরের সখিপুরে জমি নিয়ে বিরোধ, প্রকাশ্যে বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ

129

বিশেষ প্রতিনিধি শরীয়তপুরঃ শরীয়তপুরের সখিপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দিনদুপুরে একটি পরিবারের বসতঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। এসময় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ উঠেছে। এতে পরিবারটি গত একসপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

গত মঙ্গলবার (২৪ জুন ) দুপুরে উপজেলার সখিপুর থানার ডিএমখালি কালাই সরদার কান্দি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। জাহিদ মাদবরের মা খোরশেদ বেগম, স্ত্রী কাকলী ও ভাবি ইভা গুরুতর আহত হন। তারা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জাহিদ মাদবর গতকাল বাদি হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী পরিবার,পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কালাই সরদার কান্দি এলাকার আবুল হাসেম মাদবর পরিবার একই মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সাথে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। জমির মীমাংসা করার জন্য বহুবার বৈঠক হলেও কোন সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে মোহাম্মদ আলী মাদবরের নেতৃত্বে বহিরাগত ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল এসে দেশীয় অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে জাহিদ মাদবরের বসতঘরটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ঘরের প্রতিটি মালামাল আসবাবপত্র উঠানে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘরের প্রয়োজনীয় বেশ কিছু আসবাবপত্র নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।  এসময় বাঁধা দিতে গেলে খোরশেদ বেগম, কাকলী ও ইভা গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়েছেন।

ভুক্তভোগী জাহিদ মাদবর বলেন,”আমি এখন কোথায় থাকব। কে আমাদের আশ্রয় দেবে। আমার তো সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে তারা। ওইদিন সকালে দফায় দফায় এ বর্বরতা চালানো হয়েছে আমার বসতবাড়িতে। এ সময় নগদ টাকা ও স্বর্ণসহ বাড়ির সমুদয় আসবাবপত্র লুট করা হয়েছে। রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার, হাঁড়ি-পাতিলও নিয়ে গেছে। আমার ছোট ছেলেটা জ্বর নিয়ে খোলা জায়গায় পড়ে আছে। রাতে ঠাণ্ডায় কাঁপে, দিনে রোদে পুড়ে। কী করব বুঝি না। সরকার বা প্রশাসনের কেউ  এখনো আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার আশা করছি।

ভুক্তভোগী জাহিদের মা খোরশেদা বেগম বলেন,”আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই জমিতে বসবাস করছি। কিছুদিন ধরে প্রতিপক্ষ দাবি করছে এটা তাদের জমি। আমরা কাগজ দেখালেও তারা মানে না। গত মঙ্গলবার  সকালে ১০-১২ জন মিলে হামলা চালায়। ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। এখন আমরা স্বামী -সন্তান নিয়ে দু’দিন ধরে খোলা জায়গায় পড়ে আছি। কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি।”

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মোহাম্মদ আলীর বাড়ীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি। কথা হয় তার স্ত্রী রাশিদা বেগমের সাথে তিনি বলেন, তাদের কাছে আমাদের জমি পাওয়া আছে। আমরা একাধিকবার ঘর সরাতে বলেছি তারা শুনে নি তাই ভেঙে দিয়েছি। লুটপাট আমরা করি নি তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে।

এ বিষয়ে ডিএমখালি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েছি। এটা খুবই দুঃখজনক। পরিবারটি খুবই অসহায়। জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও এভাবে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া অমানবিক। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে  উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুল হক জানান, বসতঘর ভেঙ্গে ফেলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।