অনেকেই ভুল মানুষের কাছে গিয়ে ঠকে এবং কেউ কেউ সঠিক মানুষকে কাছে পেয়ে ঠকায়। ঠকা এবং ঠকানোর মস্ত খেলায় মনের সমস্ত শান্তি-প্রশান্তি আজ বহুদূর। সাম্প্রতিক কিডনি দিয়েও নারী আটকাতে পারেনি পুরুষকে—এমন একটা খবর চাউর হয়েছে চারিদিকে। সেই পুরুষের দোষ সব পুরুষকে দিয়ে দায়ী করবেন? ব্যাটা জাত খারাপ, বিশ্বাসঘাতক বলে বলে গালি দিয়ে মনের ক্ষেদ মেটাবেন? আসুন তবে আরও ঘটনা দেখি।
তিন সন্তানের মা পালিয়ে গেছেন নবম শ্রেণীর ছাত্রের সাথে! প্রবাসীর সকল অর্থসম্পদ নিয়ে পরপুরুষের সাথে চট্টিল দিয়েছে চট্টগ্রামের আলেয়া! খবরগুলো পরিচিত না? সেই স্বামীদের কী সান্ত্বনা দিবেন? এখানেও কি সব নারীকে দায়ী করবেন? বলবেন, নারী খারাপ, স্বার্থপর। কুকুর বিড়াল বিশ্বাস করা যায় কিন্তু নারী বিশ্বাস করা যায় না। ওরা লোভী, ওরা দেবী!
পরকীয়ার দোষ কেবল পুরুষের! পুরুষে পুরুষে সমকামিতা হয়, পরকীয়া নয়। পরকীয়ার জন্য অন্যকোনো নারী দরকার। কাজেই পুরুষ খারাপ হলে, নারীও খারাপ। নারী খারাপ হলে, পুরুষও খারাপ। যে থাকবে না তাকে জান কোরবান করে দিলে, কলিজা ভুনা করে দিলে কিংবা কিডনি দু’টোও দিলে সে থাকবে না। আর যে থাকার, তাকে চরম অবহেলা-অপমান করলেও, মানসিক অত্যাচারে রাখলেও কিংবা কুকুর বিড়ালের মত দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেও এক পা নড়বে না। লাথিগুতার পরেও, অপমান-গঞ্জনা সয়েও যে থাকার সে থাকবে।
থাকা এবং চলে যাওয়া জেন্ডারের সমস্যা নয় বরং এ সমস্যা পারিবারিক শিক্ষার অভাব। বাবা-মা জাতের হলে সে ব্যাটা-বেটি তিড়িংবিড়িং করতে পারে না। যারা ঠকায় তারা অবধারিতভাবে ঠকে। ন্যাচারাল পানিশমেন্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার সাধ্য মানুষের নাই তো। নারী হোক কিংবা পুরুষ—সঙ্গীকে যতটুকু ঠকাবে তার অধিক ঠকবে। এই ঠকা ও ঠকানোর হিসাব শুধু সম্পর্ক শুরু হওয়ার সময় থেকে বিবেচ্য নয় বরং যখন থেকে আমানতের দায় শুরু হয় সেই আমল থেকেই এটা বিবেচনাযোগ্য। অতীতেও যদি কারো অন্ধকার থাকে তবে ভবিষ্যতে সেটুকেরও ক্ষতিপূরণ চুকাতে হবে।
ঢালাওভাবে সব পুরুষ বা নারীকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়। পাঁচটা খারাপ দৃষ্টান্ত দিয়ে বাকি পঁচানব্বইজন মানুষ সম্পর্কে রায় দেওয়া অযৌক্তিক। ভালো-মন্দের সম্মিলিতরূপ দিয়ে সমাজ নির্মিত হয়। মন্দটাকে সাসনে আনার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। মন্দের বহুল চর্চা মানে উত্তমকে পিছিয়ে রাখার চক্রান্ত।
কত ভালো ভালো দৃষ্টান্ত আমাদের চোখের সামনে—সেগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ময়লা নিয়ে যত চর্চা হবে, আবর্জনায় যত পা ফেলবে সমাজ তত দুষিত হবে এবং দুর্গন্ধ তত চতুর্মুখী হবে। যে স্ত্রী স্বামীর স্বর্গে পরিণত হয়, যে স্বামী স্ত্রীর দুনিয়া—কিছু শেখার হলে, কিছু মানার হলে আমরা যেন তাদের থেকে শিখি। লিঙ্গ বৈষম্যমূলক ট্যাগিংয়ের সংস্কৃতি নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি পরস্পরকে বিশ্বাসহারা করে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com