আপনার কি মনে হয় সবাই শান্তি চায়? ওরে না। যারা অশান্তি চায় তারা সংখ্যায় মোটেও সামান্য নয়। এদের কোনো কাজ নাই তবুও আরেকজনের পেছনে লাগবে, কথা দিয়ে খোঁচাবে, কাঠি দিয়ে নাড়াবে। খোঁচাতে খোঁচাতে যখন সাপের লেজে খোঁচা লাগে তখন সর্বস্বান্ত হয়ে থামে। এরা সহকর্মীকে ঘাটায়, প্রতিবেশীদের খোঁটায়। এমনকি যারা তার সাথে কোনো স্বার্থে জড়িত নয় তাদের পাছাতেও হুল ফোঁটায়। ফলাফলে, ফুটফুটে সুন্দর বলে গালিগালাজ খায়।
মানুষ ঘরে-বাইরে কত সুন্দর থাকতে পারে। তা না! শয়তানে কতিপয়কে নাড়াচাড়ার উপরেই রাখবে। সহজ করে এরা কথা বলবে না, কোনোকিছুতে কম্প্রোমাইজ করবে না এবং সেক্রিফাইজের মানসিকতাই নাই। একটা মাথা আছে কিন্তু সেটার ভেতরের মগজকে কোনো কাজে না লাগিয়ে মাথা দিয়ে ঠেলতেই থাকবে। পরের নামে কুৎসা রটাবে, এর ওর কথা যাকে তাকে বলবে। দিন-রাত পরের বউ, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চর্চায় ব্যস্ত থাকবে। নিজের সন্তান যে গোল্লায়, বউ যে চিল্লায় সেদিকে সামান্য ভ্রূক্ষেপ নাই।
যে কথা বলার কথা, যে কাজ করার কথা কিংবা যে বুঝ থাকার কথা তা ক’জনের মধ্যে পান। সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ অবলীলায় মিথ্যা বলে, খুব সহজে হৃদয় ভাঙে এবং হাসতে হাসতে বিশ্বাস হত্যা করে। যে জানে অভিশাপ নিয়ে ভালো থাকা যায় না সেও যদি সুখে থাকতে চায়- সেটা হবে? মানুষ ভাবে তার হঠকারিতা কেউ ধরতে পারছে না, তার ধোঁকাবাজি কেউ বুঝতে পারছে না- আসলে কী তাই? দু’মিনিট কথা বললে হৃদয় পড়ে ফেলা যায়, চোখের দিকে তাকিয়ে চিন্তা বলা যায়- এই সহজ সত্য আমরা কেন বুঝি না?
কাউকে ব্যথা দিলে সে ব্যথা আসলে কে পায়? ঠকালে অন্যরা ঠকে যায়? এই যে মানসিক অস্থিরতা, বুকের ব্যথা এবং হতাশা-দুশ্চিন্তা একদিনে এবং এমনি এমনি জন্মেনি। কতটুকু দায় ও কতটুকু দেনার পথ গলিয়ে মানুষ তার বর্তমানে উপনীত হয়েছে তা ব্যক্তি জানে! অন্যকেই না হোক অন্তত যার অপরাধ সে তো নিশ্চিত জানে। তবুও বড় গলায় নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চেষ্টা চলে। এভাবে শান্তি আসে? মোটেও না। শান্তি আসার কথাও না। শান্তি এত সরল না, এমন সহজ পথে আসেও না!
মুখে বলি শান্তি চাই। অথচ অশান্তি হয় এমন একটা কাজকেও বাদ দেই না। কাউকে একটু হারাতে পারলে খুব স্বস্তি অনুভব করি। কারো চোখে পানি আনতে পারলে উল্লাস করি। কারো মন খারাপের কারণ হয়ে, কারো বারণ করা পথে হেঁটে চলে সুখনিদ্রায় গমন করি। তবে বিবেক ঘুমিয়ে থাকতে পারে কিন্তু মরে না। যখন বিবেক ক্ষণিকের জন্যেও জাগে তখন ভালোর আলো কর্পূরের মত উবে যায়। মানুষ ডুবে যায় হতাশায়। ভাগ্যকে দোষারোপ করে নিজেকে সান্ত্বনার বাণী শোনাই। অথচ যা ভোগ করছি তার সিংহভাগ যে কর্মের ফল তা স্বীকার করতে অনীহা প্রকাশ করি।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com