মোঃ সাইদুজ্জামান, ভেড়ামারা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামে রয়েছে একটি শতবর্ষী রাস্তা, যা ব্রিটিশ আমলেরও পূর্বের বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজ পর্যন্ত এই রাস্তায় পরেনি এক ডালি মাটিও, বসেনি একটি ইটের খোয়া পর্যন্ত!
প্রায় ১০০০ ফিট দৈর্ঘ্যের এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি একদিকে যেমন এলাকাবাসীর চলাচলের প্রধান মাধ্যম, তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের বিস্তীর্ণ বিলের মাঠ থেকে কৃষিপণ্য পরিবহনেরও একমাত্র রাস্তা। প্রতিদিন হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল এই রাস্তা দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়।
শুধু কৃষক নয়, এই রাস্তা দিয়েই স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিশু ও বৃদ্ধ মা-বোনেরাও চলাচল করে। কিন্তু বর্ষাকালে এই রাস্তাটি পরিণত হয় কাদার জলাভূমিতে এবং গ্রীষ্মকালে সৃষ্টি হয় ধুলোর ঝড়। হাঁটা চলার অযোগ্য হয়ে পড়ে এই রাস্তা, যার ফলে জনজীবন চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নুর ইসলাম (৬৫) বলেন,
“আমি ছোটবেলা থেকেই এই রাস্তায় চলাফেরা করছি। তখনো যেমন কাঁচা ছিল, আজও তেমনই আছে। কোনো সরকারই আমাদের এই দুর্ভোগ দেখেনি। বর্ষায় হাঁটতে গেলে পা কাদায় আটকে যায়, গরমে ধুলায় দম বন্ধ হয়ে আসে।”
একই এলাকার গৃহবধূ রাশেদা খাতুন (৪৮) বলেন,
“আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে খুব কষ্ট পায়। জামাকাপড় নষ্ট হয়, পড়ে যায়, আবার অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ে। একটু পাকা রাস্তা হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।”
স্কুলছাত্রী সুমাইয়া খাতুন (৯ম শ্রেণি) জানায়,
“বর্ষার সময় আমরা অনেক সময় স্কুলে যেতে পারি না। জুতা কাদা হয়ে যায়, স্লিপ করে পড়ে যাই। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহুবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই উন্নয়নের যুগেও যেন তারা পিছিয়ে পড়া এক গ্রামেই বাস করছে।
এখন সময় এসেছে এই ঐতিহাসিক রাস্তাটিকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাকা করে তোলার। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই—এই রাস্তাটির দ্রুত সংস্কার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করুন। কারণ, এটি শুধুমাত্র একটি রাস্তা নয়, এটি ফকিরাবাদ গ্রামের মানুষের জীবন ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ।