জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার খোঁজ নিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

40

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার (২৬ জুলাই) রাত ৯টা ১০ মিনিটে হাসপাতালে যান তিনি। হাসপাতালে পৌঁছে প্রধান উপদেষ্টা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা শোনেন এবং আহত রোগীদের বর্তমান অবস্থা জানতে চান।

এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূস নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

অধ্যাপক নাসির জানান, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। রোগীদের আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, সবার সম্মিলিত মূল্যায়নে বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪ জন ক্রিটিক্যাল, ৯ জন সিভিয়ার এবং ২৩ জন ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরির রোগী আছেন। এই মূল্যায়ন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা হতাহতের বিস্তারিত জানতে চাইলে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি হাসপাতালগুলোতে দগ্ধ রোগীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসকরা অতিদ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রায় সবাইকে বার্ন ইন্সষ্টিটিউটে এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার পরপরই মন্ত্রণালয় থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালককে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। চিকিৎসক, নার্সসহ সকল সেবাদানকারীরা প্রস্তুত ছিলেন এবং একসাথে জরুরী বিভাগে আগত প্রায় ৩০ জন দগ্ধ রোগীকে দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম হয়েছেন।

অধ্যাপক সায়েদুর জানান আরো জানান, প্রায় ১০টি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে রোগীদের দ্রুত স্থানান্তরিত করার কারণে প্রথমদিকে নিহত ও আহত রোগীর সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দেহাবশেষ ছিল যেগুলো ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়েছে, যার ফলে কিছু সময় লেগেছে।

প্রধান উপদেষ্টা অবিলম্বে এবিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতে ও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিংয়ের প্রতি জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন তিনি। এ কার্যক্রমে সকল নিহতের পরিবার, আহত ও আহতের পরিবার এবং মাইলষ্টোন স্কুলের প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর পাশাপাশি, দগ্ধ রোগীদের নিকটাত্মীয়দের হাসপাতালে অবস্থানের সময়ে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে পরিচালককে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্সসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে, বিদেশ থেকে যারা এই বিপদের সময়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাড়িয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

হাসপাতাল পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন।