সরকারি শামসুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার :
সরকারি শামসুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলামের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে দরখাস্তের আলোকে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক তার কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞাব বিভাগের প্রভাষক জনাব সাইফুল ইসলামকে যথারীতি দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেছেন। ২৮/০৬/২০১৬ ইং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ৩০/০৬ /২০১৬ ইং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ১৯৯ টি কলেজ জাতীয়কণের লক্ষ্যে নিয়োগ, স্থাবর -অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরসহ গভর্নিংবডির কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ কলেজগুলো জাতীয়করণ করা হয়। শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার শামসুর রহমান কলেজ তারমধ্যে একটি। কলেজ গভর্নিংবডির সাবেক সভাপতি শামসুর রহমান, তার ভাই সাবেক সদস্য আনিসুর রহমান এবং তার ছেলে প্রভাবশালী সদস্য জিয়াউর রহমান (আহাদ) যিনি ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট ডোনার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সফরসঙ্গী অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন (কপি সংযুক্ত), শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক (এরা প্রত্যেকে বে- গ্রুপের (কর্নধার) চেয়ারম্যান ও এমডির দায়িত্বে) তারা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দলীয় ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে বাবা,ভাই, ছেলে,ভাগ্নে দ্বারা পকেট কমিটি গঠন করে কলেজের সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ ও লুটপাটের আখড়ায় পরিনত করেন।তারা ৩০/৬/২০১৬ ইং তারিখের মন্ত্রণালয়ের সেই প্রজ্ঞাপনকে না মেনে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এওয়াজ বিনিময়ের নামে নাটক সাজিয়ে ২৪/৮/২০১৬ ইং তারিখে ৩ টি দলিলের মাধ্যমে ২৪৭ শতাংশ জমি আত্নসাৎ করেন।যাহার দলিল নাম্বারগুলো হলো ২৪৫৬/২০১৬, ২৪৫৭ / ২০১৬ এবং ২৪৫৮/ ২০১৬ । যেখানে বহুতল আবাসিক ভবন, শিক্ষক আবাসি কোয়াটার,ছাত্রী হোস্টেলসহ মোট ২৪৭ শতাংশ জমি বেআইনিভাবে তাদের ব্যক্তিগত নামে তৎকালীন অধ্যক্ষ মৌজে আলী হাওলাদারকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা, ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে লিখে দিতে বাধ্য করেন। সেই সুযোগে অধ্যক্ষ মৌজে আলী হাওলাদারও নামে -বেনামে কলেজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে বিভিন্নভাবে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা আত্মসাৎ করেন। দূর্নীতি ও আত্নসাৎকৃত সম্পত্তির বাজার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা।ভুক্তভোগী প্রভাষক এখানকার স্থানীয় শিক্ষক ও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এই সীমাহীন দূর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়।তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি বিধি বিধান না মেনে গভর্নিংবডি সরাসরি বে- আইনিভানে ০১/১১/২০১৬ ইং সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩১/০৫/২০১৭ ইং চূড়ান্ত বরখাস্ত করেন।বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরেজমিনে তদন্ত করার নির্দেশনা দেন।কলেজটি সরেজমিনে তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তারা কলেজের দূর্নীতি, সম্পত্তি আত্মসাৎ ও বেআইনিভাবে তাকে বরাখাস্তকরণের সত্যতা পান এবং তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।তদন্ত প্রতিবেদন, ও সকল তথ্য প্রমানাধি পর্যালোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১০/০৯/২০২৩ ইং পত্র ইস্যুর মাধ্যমে তাকে চাকরিতে পূনর্বহালের জন্য তৎকালীন অধ্যক্ষ মহোদয়কে নির্দেশ প্রদান করেন। সেইমতে অধ্যক্ষ মহোদয় তাকে
০৪/১০/২০২৩ ইং পুনর্বহাল ও যোগদান করান।যোগদানের পর তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে থাকেন এবং বেতন ভাতাদি গ্রহন করেন।প্রভাষক চাকরিতে পূনর্বহাল হওয়ায় দূর্নীতিবাজ ফ্যাসিষ্টরা খুবই ক্ষিপ্ত। এই প্রতিষ্ঠানে তার চাকরি করাটা তারা কোনভাবেই মেনে নিতে না পেরে নতুন করে বিভিন্ন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু করেন।তারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতা ব্যবহার করে, দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কোন কারন ব্যতিরেকে ২৪/০৩/২০২৪ ইং মন্ত্রণালয় থেকে তার পূনর্বহালের চিঠি বাতিল করান এবং ২৫/০৩/২০২৪ ইং কলেজের যোগদান পত্রটিও বাতিল করেন। এতে সে সংক্ষুব্ধ হয়ে এই পত্র দুটিকে চ্যালেন্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে রীট করলে মহামান্য হাইকোর্ট তার ২৯/০৪/২০২৪ ইং তারিখের আদেশে ঐ দুটি পত্রকে বেআইনি ও অবৈধ উল্লেখ করে পত্র দুটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। বিধায় তার আগের পূনর্বহাল ও যোগদান পত্রটি কার্যকর হয়ে যায়। এরপর কলেজ তথা রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ তা না মন্জুর করে আগের আদেশ বহাল রাখেন ।কিন্তু অধ্যক্ষ মহোদয় মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন না করে যোগদান না করিয়ে উল্টো হয়রানি করতে থাকেন।মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানোর পর গত ৩০/০৪/২০২৫ ইং তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পত্র ইস্যুর মাধ্যমে তাকে যথারীতি দায়িত্ব পালন করতে দেয়ার জন্য অধ্যক্ষ মহোদয়কে নির্দেশনা প্রদান করেন।অধ্যক্ষ মহোদয় মন্ত্রনালয়ের সেই নির্দেশনা না মেনে উল্টো হয়রানি করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয় (কপি সংযুক্ত)।অবশেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মাত্র ৫ দিনের সময়ের ভিতরে যোগদান করানোর জন্য গত ১৩/০৭/২০২৫ ইং অধ্যক্ষ মহোদয়কে পুনরায় নির্দেশনা তাগিদ পত্র প্রদান করেন (কপি সংযুক্ত) । সেই নির্দেশনার আলোকে অধ্যক্ষ মহোদয় বরাবর যোগদানের জন্য গেলে তিনি বলেন এটাতো অনেক বড় চাকরি। তাই আমাকে খরচপাতি বাবদ ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে । অন্যথায় আমি যোগদান করাব না।এতে কেউ আমাকে কিছু করতে পারবে না। আমি কোন কিছু ভয় করি না। আত্মসাৎকৃত সরকারি সম্পত্তিগুলো তাদের নামে ২৪/০৮/২০১৬ ইং তারিখে লিখে নিলে বিষয়টা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয় এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয়। জনরোষানল থেকে বাঁচতে অবশেষে ২০১৯ সালের দিকে তাদের পারিবারিক ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত সফুরা বেগম মহিলা কলেজের নামে দান দেখানো হয়।সরকারি কলেজের সরকারি সম্পত্তি এভাবে পারিবারিক ব্যক্তিগত ট্রাস্টিতে দেয়া আরেকটি প্রতারনা।পারিবারিক ট্রাষ্টি আজকে আছে কালকে নাও থাকতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজের এই সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বর্তমান অধ্যক্ষ মহোদয়কে একাধিক চিঠি ও তাগিদ পত্র ইস্যু করেন। অধ্যক্ষ মহোদয় ফ্যাসিষ্ট দুর্নীতিবাজদের থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের সাথে লিয়াজো করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার না করে তাদের দোসর, আস্থাভাজন ও রক্ষক হয়ে ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেছেন।শুধু তাই নয়,এই কলেজটি ১৯৮৪ সালে ইদিলপুর মহাবিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৯৪ সালে শামসুর রহমান কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি হয়ে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষদের জিম্মি করে তার নামে কলেজের নামকরণ করতে বাধ্য করেন,সেইসাথে কলেজের সকল দাতা সদস্যদের নাম- নিশানা চিরতরে মুছে ফেলেন।এভাবে তিনি হয়ে যান শামসুর রহমান কলেজর প্রতিষ্ঠাতা।২০১৬ সালে কলেজটি সরকারিকরন হলেও তাদের দূর্নীতি ধামাচাপা দিতে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে তাদের পছন্দ মতো,তাদের আস্থাভাজন শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষদেরকে তদবির করে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অত্র কলেজে সংযুক্ত করিয়ে তাদের নির্দেশ মোতাবেক চলতে বাধ্য করেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার উপর অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ স্যার অবিচার করছেন। আমার দোষ; আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি। তিনি মন্ত্রণালয়ের অর্ডার মানেন না। সর্বশেষ আমাকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কলেজে জয়েন্ট করার অর্ডার হলেও তিনি তা তোয়াক্কা না করে আমাকে জয়েন্ট দেন নি। আমি সরকারের নিকট সুবিচার চাই।
এ ব্যাপারে সরকারি শামসুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হারুন অর রশীদ বলেন, আমি ফোনে কোনো বক্তব্য দিব না, জানতে চাইলে কলেজে আসুন, সাক্ষাতে বলবো।