কেউ কিছু বললে প্রতিত্তোর এখনই করতে ইচ্ছা হয়? নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়তে মন চায়? কারো সমালোচনা কিংবা নিন্দায় খাওয়া-ঘুম হারিয়ে যায়? কারো দেওয়া অপবাদে-অপমানে ভীষণ কান্না পায়? তাহলে বুঝে নিন, আপনি মানসিক পরিপক্বতা থেকে এখনো অনেক দূরে। কারো অবহেলা বা অবজ্ঞায় দিন নষ্ট করলে বোঝা যায়, আপনি এখনও অপরিণত মানসিকতায় আবদ্ধ।
আপনার চারপাশ কণ্টকাকীর্ণ। এখানে মন্তব্য করে কারো গন্তব্য ঘুরিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চলে, নিন্দা করে ছন্দপতনের চেষ্টা হয়। এতেই যদি কেউ থেমে যায়, তবে নিশ্চিতভাবেই তার যাত্রাপথ পিছনের দিকেই মোড় নেয়।
আপনার চারপাশেই এমন কিছু মানুষ আছে, যারা দুদিকেই খেলা জানে। সামনে থাকলে আপন মনে হয়, আড়ালে গিয়ে তারা কেচ্ছা করে ফেরে। তারা আপনার ওপর অপবাদ আর অপমানের বোঝা চাপায়, যাতে আপনি নুয়ে পড়েন। যাদের সবকিছু দিয়ে বিশ্বাস করেছিলেন, তারাই সেই বিশ্বাস ভাঙার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। তারা বন্ধুর ছদ্মবেশে থাকে, সহকর্মীর অবয়বে পাশে বসে। এককথাদশকানে রূপ বদলে ছড়িয়ে দেয়। আপনাকে হেয় করে, অপমান করে আনন্দ খোঁজে। এমন মানুষদের সংখ্যা আপনার ‘আপন’ ভাবা তালিকায় কম নয়।
কেউ কেউ খোঁটা দিয়ে, তির্যক কথা বলে আঘাত দিতে ভালোবাসে। তারা অন্যকে ছোট করে আনন্দ পায়। গুচ্ছ গুচ্ছ অপমানের পাঁক ছুড়ে দেয়। তারা প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে উপকার অস্বীকার করে। সর্বকাজে কৃতিত্ব কুড়ানোয় ব্যস্ত থাকে। এমন লোকদের কারণে যদি আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট হয়, তবে তারা ঘরের হলেও শত্রু। এড়িয়ে চলুন। কৌশলে হলেও সত্য উচ্চারণ করতে না পারলে, তারা আপনাকে মানসিকভাবে নিঃশেষ করে দেবে।
অন্যের অনিষ্ট থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দূরত্ব বজায় রাখুন। নিন্দার ঝড়েও নিজের পথ ধরে এগিয়ে চলুন। মনে রাখবেন, একবার ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিলে একজীবনেদ্বিতীয়বার মাথা তুলে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়।
সব প্রশ্নের উত্তর এখনই নয়—ধৈর্য ধরুন। আপনার নীরবতা একসময় সময়কে দিয়ে জবাব দেবে। সফলতার পথে এগিয়ে যান, সংগ্রাম থামাবেন না। কুচক্রীদের সাথে যুক্তিতর্কে জেতা নয়—সততাই জয় নিশ্চিত করে। আপনার দিকে ছুটে আসা ইটকেও পাশ কাটিয়ে চলুন। প্রতিটি কথায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে গেলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।
কারো কথায় মন খারাপ করার কিছু নেই। আপনি সবসময়ই আপনি—ব্যক্তিত্ব ধরে রাখুন। মন্দ লোকের মন্দ কথায় কান দেবেন না। খোঁচায় বিদ্ধ হয়ে পড়বেন না। আপনার দিন আপনার সম্পদ, তাই সরল পথে থাকুন। বাঁধা আসলেও সম্মান বজায় থাকবে।
জীবন অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। অল্পতেরিঅ্যাক্ট করলে, হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে তাড়াহুড়ো করবেন না। আপনার কাজ ও কথা যেন আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। দ্বিচারিতা নয়—অন্তরে যা লালন করেন, তা দিয়েই অন্যকে মূল্য দিন। সাধ্যের বাইরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন না।
ভালো ও খারাপ দিন পাশাপাশি চলে। চ্যালেঞ্জ থেকে পালালে সুখ উপভোগ্য হয় না। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই তো জীবন। তাই সতর্ক হোন। যাচাই করে তবেই কাউকে বিশ্বাস করুন। শুধু সেই হাতেই ভরসার স্পর্শ দিন, যারা সম্মান রাখতে জানে। তবুও অকৃতজ্ঞতা জেনেও সুযোগ পেলে অন্যের উপকার করুন। তার প্রতিদান ভিন্ন পথে আপনার জীবনে ফিরে আসবে।
মানুষের সামনে একজন সৎ পরামর্শদাতা হয়ে উঠুন। কারো ক্ষতির চিন্তা করলে জীবনের স্বাভাবিক গতি থেমে যেতে পারে। কষ্ট সহ্য করুন, তবুও কারো হক নষ্ট করবেন না। প্রকাশ্য পাপ যেমন ভয়ংকর, গোপন পাপও কম নয়।
তাই কথা, কাজ, চিন্তায় সতর্ক থাকুন। নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। ব্যক্তিত্বের সৌরভে চারপাশ মাতোয়ারা হয়ে উঠুক। মনে রাখবেন, ভালো মানুষের জীবনের চেয়ে আকর্ষণীয় কিছু এই ধরণীতে নেই।
রাজুআহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com