বিশেষ প্রতিনিধিঃ দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির (স্টপেজ) দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয় লোকজন। খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ সময় মানববন্ধনকারীরা রেললাইনে লাল কাপড় উড়িয়ে আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি প্রায় ২ ঘন্টা থামিয়ে রাখেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
শনিবার ২ আগস্ট বিকাল ৫.টা ৩০ মিনিটের দিকে স্টেশনের অদূরে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস ও কপোতাক্ষ ট্রেন নং ৭১৫/৭১৬) থামিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। তারা স্টেশন সংস্কার ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ও কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রাবিরতি এবং স্টেশনের সংস্কার।
চুয়াডাঙ্গা জয়রামপুর স্টেশন” ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি রেলওয়ে স্টেশন। এটি চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা আজও রেল যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এই স্টেশনটি সেই সময়ের স্থাপত্যশৈলীর একটি নিদর্শন।
দর্শনা থেকে জগতি রেলপথ ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর চালু হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে এই রেলপথ স্থাপন করে, যা বাংলাদেশের প্রথম রেলপথগুলির মধ্যে একটি। এই রেলপথটি দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার রেলপথ চালু করে। এই রেলপথটি তৎকালীন পূর্ববঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জানা গেছে, ১৯২৯ দামুড়হুদা উপজেলা জয়রামপুর স্টেশনটি স্থাপিত হয় হাউলি ইউনিয়নের জয়রাম পুর এলাকায়, যা জয়রামপুর স্টেশন নামে পরিচিত। শতবর্ষী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী এই স্টেশনে স্টেশনমাস্টার, টিকিট মাস্টার, পোর্টারম্যান, পয়েন্টসম্যান, গেটম্যানসহ জনবল ছিল ১২ জন। বর্তমানে কোনো পদে একজন কর্মরত লোক নাই । শুধু ৩ টি লোকাল ট্রেন সেখানে থামে।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, রেলওয়ে স্টেশনটি অনেক পুরানো। ট্রেন থামবে বলে লাইন সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র নোকাল ট্রেন ছাড়া কোনো ট্রেন থামে না। আমাদের এই জয়রামপুর গ্রামটা অনেক বড় এখান থেকে অনেক রোগী যায় রাজশাহীতে
এর আগে স্টেশনে ট্রেন থামানো হয়েছে। বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন থামানোর আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা কথা রাখেনি।
সাগরদাড়ি ট্রেনের যাত্রী শিপন আলী বলেন, ট্রেন নির্ধারিত সময় ছেড়েছিল খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে। এরপর জয়রাম পুর স্টেশনে এলাকায় এসে থেমে যায়। ট্রেন থেকে নিচে এসে দেখি, রেললাইনে একটি লাল পতাকা টানিয়ে অবরোধ করছে এলাকাবাসী। এই অবরোধের ফলে দীর্ঘ ২: ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ট্রেন থেমে আছে। এতে করে ট্রেনের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
টিটন আলী নামে আরেক যাত্রী বলেন, এই ট্রেন খুলনা রাজশাহী রুটে চলাচল করে। ট্রেনের বেশিরভাগ যাত্রী চিকিৎসা কাজে রাজশাহীতে আসেন। বগিগুলোতে অনেক অসুস্থ যাত্রী এবং নারী, শিশুরা রয়েছে। তারা গরমে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দাবি দ্রুত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ব্যবস্থা নিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ এই স্টেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। লোকাল ছারা আন্তঃনগর ট্রেন থামে না। পুরো স্টেশনের প্লাটফর্মে ছাউনি আছে। তবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। স্টপেজ না থাকলেও অনেক সময় ক্রসিংয়ের জন্য দাঁড়ায় ট্রেন।
ঈশ্বরদী-খুলনা রেললাইন নির্মাণ করা হয়। এটি তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের কলকাতা থেকে রেলপথে আসা পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রুট ছিল। রেললাইন সম্প্রসারণ: দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ও খুলনার দিকে রেললাইন বিস্তারের ফলে জয়রামপুর একটি যাত্রী ও কৃষিপণ্য পরিবহনের ছোট স্টপেজ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এই জয়রামপুর স্টেশনটি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রেলপথ ও স্টেশনগুলি কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময় অনেক রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তা পুনরায় সচল করা হয়।
এ বিষয়ে সাগরদাঁড়ি ট্রেনের গার্ড বলেন, এ বিষয় আমরা এর আগেও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে
ইতিমধ্যে রেলওয়ে ঈশ্বরদী জোনাল অফিস রাজশাহী এবং রেল উপদেষ্টা বরাবর স্বারক দিয়েছে আন্দোলনকারিরা।
জয়রামপুর রেলওয়ে স্টেশন অধিকার ও সংরক্ষণ ঐক্য এবং জয়রামপুর ট্রেন সুবিধা সংরক্ষণ কমিটি নামক সংগঠন নেত্রীত্ব দিচ্ছে।