এস ইসলাম খাজা কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার হোমনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে মহসিন (৩৫) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের ফেসবুক পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের ফকির কফিল উদ্দিন শাহ’র নাতি ও আলেক শাহ’র ছেলে মহসিন তার ফেসবুক আইডি “বেমজা মহসিন” থেকে এক স্ট্যাটাসে মহানবী (সঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এতে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

ঘটনার পরই সাধারণ মানুষ ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জহিরুল হক জহর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা আইনগত আশ্বাস দিলে জনতা কিছুটা শান্ত হয়।

পরে শরীফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্ত মহসিনকে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠায় এবং তার রিমান্ড আবেদন করে।

ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে আসাদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মাওলানা সাইদুর রহমান ও মাওলানা তাইজুল ইসলাম। মানববন্ধনের পর উত্তেজিত জনতা আসাদপুর গ্রামে ফকির কফিল উদ্দিন শাহ’র মাজার ও তার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পরবর্তীতে একই ধারায় ভাঙচুর-লুটপাট হয় নোয়াগাঁওয়ের কালু ফকিরের মাজার, আব্দু শাহ’র মাজার ও হাওয়ালীর মাজারে। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেই সুযোগে দুর্বৃত্তরা অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে মুহূর্তেই ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, দলিলপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র পুড়ে ফেলা হয়। ঘটনাস্থলে হোমনা থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাটি কারো উসকানিতে ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি, হোমনা সার্কেল) মো. আব্দুল করিম জানান, “ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। জনতা চারদিকে থেকে আক্রমণ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এই ঘটনায় প্রশাসন নিজ উদ্যোগে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক মো. জহিরুল হক জহর বলেন, “আমি নিজে উপস্থিত থেকে জনতাকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু যেসব বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে, আমি এসবের সমর্থন করি না।”
অভিযুক্তের ব্যাখ্যা ও ক্ষমা প্রার্থনা
উল্লেখ্য, বিতর্কিত স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর অভিযুক্ত মহসিন তার ফেসবুক আইডিতে দ্বিতীয় একটি পোস্টে জাতির কাছে ক্ষমা চান। সেখানে তিনি লেখেন, “আমি নবীজিকে খারাপ বলিনি। আমি কষ্ট পেয়ে এমন কথা লিখেছি। আমার কোনো পুত্র সন্তান নেই, কন্যা সন্তান থাকার কারণে আমাকে অনেক সময় অপমান সহ্য করতে হয়। এই কষ্ট থেকেই ওই কথা লিখে ফেলেছি। আমি নবীজিকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন।”
ঘটনার পর পুরো আসাদপুর গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এলাকাবাসীর মাঝে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ও বিশিষ্টজনরা মাজার ও সাধারণ মানুষের বাড়িতে হামলার বিচার দাবী।








