বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তারেক রহমান শুধু একজন ব্যক্তিত্ব নন এখন একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের নাম। যার নেতৃত্বের উপর গবেষণা চলছে দেশের সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে। জীবন্ত কিংবদন্তি এই মহানায়ক এখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হননি; দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে আছেন। ক্ষমতার কেন্দ্রে না থেকেও তাঁর ছায়ায় যেন বেঁচে আছে বাংলাদেশের বর্তমান স্বাধীনতা, ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রে পুনঃ প্রতিষ্ঠা, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন।
অতীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ যেমন উন্নয়ন ও জীবনের স্বপ্ন গেঁথেছিল ঠিক তেমনিভাবে তারেক রহমানকে ঘিরে বাংলাদেশ তার স্বপ্ন আবারো বুনেছে।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দীর্ঘ ১৭ বছরের কলঙ্কময় স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে যিনি নেতৃত্ব প্রদান করেছেন তিনিই তারেক রহমান। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে একটি স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও নির্দেশনা দলমত নির্বিশেষে সর্বজন স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আগামীর বাংলাদেশে যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনাব তারেক রহমানই একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনিবার্য প্রতীক। তাঁর উপর বয়ে যাওয়া চক্রান্তময় ওয়ান-ইলাভেনের পর হত্যারছক ও দমননীতি, দীর্ঘ লন্ডন নির্বাসন, ডিজিটাল নেতৃত্ব, দেশের জন্য ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখা এবং সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্টের গণ আন্দোলনে তাঁর সফল নেতৃত্ব—সবই প্রমাণ করে তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের অন্যতম প্রধান স্থপতি।
তারেক রহমান বিকশিত হয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে। শহীদ জিয়া পরিবারের প্রত্যেকেই একেকজন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতো দেশের জন্য দীপ্ততা ও ক্ষীপ্রতা ধারণ করেছেন তারেক রহমান। তাই দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী শক্তিরা ১/১১ ঘটিয়ে প্রথমেই তাঁকে টার্গেট করেছিল। কয়েক শত কোটি টাকা বাজেট করে দেশের মিডিয়া ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে লেলিয়ে দেয়া হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। মিথ্যা অপপ্রচারে সয়লাব করা হয় পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাগুলো ও টেলিভিশনের পর্দা গুলোতে চলতে থাকে নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা মূলক স্টোরি। সেই সাথে তাঁকে হত্যা কিংবা চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার চক্রান্ত চলে সমানতালে।
২০০১ সালের বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অষ্টম নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রচারণার কাজে নেতৃত্ব দেন তারেক রহমান। তাঁর সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত প্রচারণায় নির্বাচনী মাঠে বিএনপিকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যায়। ফলে নির্বাচনে বিএনপি ভূমিধস বিজয় অর্জন শেষে সরকার গঠন করে। তারেক রহমান দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসাবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর ২০০২ সালের জুন মাসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে তিনি যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন, তা তাঁকে তৃণমূল জনপ্রিয়তায় নিয়ে যায়। বুঝতে কারও বাকি ছিল না, বেগম জিয়ার পর তারেক রহমানের হাতেই যাবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব। সেই থেকেই দেশ বিরোধী শক্তি উঠেপড়ে লাগে তারেক রহমানের ইমেজ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায়। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।
তারেক রহমানের উপর দমন-নিপীড়নের অন্ধকার অধ্যায় : ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমে আসে অন্ধকার। অবৈধ সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি দমন-নিপীড়নের শিকার হন তারেক রহমান। গ্রেফতারের পর কারাগারে শারীরিক নির্যাতনে তিনি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (২০০৮) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (২০০৯) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে—এসব নির্যাতন ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কিন্তু প্রতিকূলতা তাঁকে ভেঙে দেয়নি; বরং দৃঢ় করেছে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও নেতৃত্বের সংকল্প।
নির্বাসিত জীবন থেকে ডিজিটাল নেতৃত্ব : দেশে রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও চিকিৎসার প্রয়োজনে লন্ডন গমন তারেক রহমানের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। নির্বাসন সাধারণত নেতাদের নিস্ক্রিয় করে তোলে, কিন্তু তারেক রহমান সেটিকেই শক্তিতে রূপান্তর করেন। লন্ডন থেকেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে যথাযোগ্য নেতৃত্ব দিতে থাকেন। দলীয় বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান, পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভিডিও কনফারেন্স, অনলাইন সভা, আন্তর্জাতিক সংলাপ ও প্রবাসী সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশবাসীকে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার সাহস যুগিয়ে ছিলেন তারেক রহমান।
দ্য গার্ডিয়ান (২০১৮) তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে মন্তব্য করেছিল: “Exiled leader Tarique Rahman continues to influence Bangladesh politics from London, keeping alive the dream of democracy.”
বিবিসি (২০২১) বিশ্লেষণে লিখেছিল: “Despite political persecution, Tarique Rahman has managed to lead his party digitally and keep the opposition movement alive.”
‘২৪ এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে তারেক রহমান : ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন তারেক রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তৈরি হওয়া একটি ইস্যুকে গণঅভ্যুত্থানের রূপ দেওয়ার মূল পরিকল্পক ছিলেন তারেক রহমান। তাঁর দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সেই স্বৈরাচারের বুকে শেষ পেরেক ঠুকতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন তারেক রহমান। বিপ্লব মাখা আন্দোলনের নেতৃত্বকে কিভাবে পরিচালিত করে মাত্র এক মাসের মাথায় চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা যায় তার অনন্য রূপকার ছিলেন তারেক রহমান। তার আহবানে মৃত্যুর উপতক্যায় নির্ভয় চোখে লাল রক্ত পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে লাখো লাখো বিপ্লবী ধাবমান ছিল হাসিনার অবৈধ মসনদ উৎপাটনে। অবশেষে পাঁচ আগস্ট সেই মহেন্দ্রক্ষনের দেখা পান বিপ্লবীরা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা, দ্য ইকোনমিস্ট ও নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল—এটি ছিল এক অকুতোভয় গণঅভ্যুত্থান , যা লন্ডন থেকে পরিচালিত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে অভিহিত করেছেন “a revolution under an exiled leader’s command.”
৩১ দফা সংস্কার রূপরেখা: গণতন্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট- ২০২২ সালে প্রকাশিত তারেক রহমানের ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখাকে রাজনৈতিক মহল আখ্যা দিয়েছে “Blueprint for Democratic Bangladesh”। এতে গুরুত্ব পায়—
◑ সুশাসন ও জবাবদিহিতা।
◑ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা।
◑ শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন।
◑ বিকেন্দ্রীকরণ ও দুর্নীতি দমন।
◑ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা।
ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও পাকিস্তানের জিন্নাহ ইনস্টিটিউট একে দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য সংস্কারধর্মী রূপরেখা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (২০২২) বিএনপির আন্দোলনকে আখ্যা দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রাম হিসেবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (২০২৩) বলেছে, বিরোধী দলের উপর দমননীতি দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক। ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও তাঁর নাম উচ্চারিত হয়েছে বারবার।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ : তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে— গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে নিয়মিত সুষ্ঠু নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার ও বহুদলীয় রাজনীতির প্রবাহমান ধারা বিদ্যমান থাকবে বাংলাদেশে।
ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন ও রাজনৈতিক মামলাগুলোর তড়িৎ সমাধানে বিচার বিভাগীয় সংস্কার সাধিত হবে।
আধুনিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা, আইসিটির সর্বাধুনিকীকরন , যুব উদ্যোক্তা ও বৈদেশিক বিনিয়োগ নির্ভর উন্নয়নের পাশাপাশি স্বদেশী বিনিয়োগ সহজীকরণ করা হবে।
বিকেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থা : জেলা পর্যায়ে উন্নয়ন ক্ষমতা হস্তান্তর ও জিরো টলারেন্স ভিত্তিক দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি : আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক আস্থা অর্জনে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চাহিদা অক্ষুন্য রেখে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
তরুণ নেতৃত্বের উত্থানে গুরুত্বারোপ করে শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করবে বিএনপি।
তারেক রহমান আজ কেবল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন—তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মুক্তির সংগ্রামের প্রতীক। রাজনীতিতে তৃণমূল নেতৃত্বের গুরুত্বারোপ, ওয়ান-ইলেভেনের নানাবিধ চক্রান্ত মোকাবিলা, লন্ডনের নির্বাসন, ডিজিটাল নেতৃত্ব কিংবা সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের সফল রূপকার—সবই প্রমাণ করে তাঁর ধৈর্য, দূরদর্শিতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন করে জেগে উঠছে। বলা যায়, তিনি দুর্দান্ত এক আশার প্রতীক। তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অবিস্মরণীয় অন্যন্য নাম, তারেক রহমান।
লেখক: কবীর আহমেদ ভূঁইয়া,
রাজনৈতিক, উন্নয়ন কৌশলবিদ, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, ভূঁইয়া গ্লোবাল ফাউন্ডেশন।








