কার্গো ভিলেজে বিধ্বংসী আগুন: পুড়ে গেল কোটি টাকার পণ্য, প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

0
90
ছবি - সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে বিপুল পরিমাণ আমদানি ও রপ্তানির পণ্য। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে আগুন লাগার পর সাত ঘণ্টার টানা চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে ততক্ষণে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার।

ছবি – সংগৃহীত

আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন শুরু হয় ওয়্যারহাউসের ভেতরে, এরপর দ্রুত তা কেমিক্যাল ও কাপড় সংরক্ষিত অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো এলাকা ঢেকে যায়।

বিভিন্ন সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ক্ষুদ্র আমদানিকারকরা বলছেন, তারা সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের প্রয়োজনীয় নথিপত্র, ইনভয়েস, এয়ারবিল ও প্যাকিং লিস্ট পুড়ে যাওয়ায় এখন ক্ষতিপূরণের দাবিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ইমুট্রান্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ হাসান জানান, তাদের ১৩ হাজার ডলারের পণ্য আগুনে পুড়ে গেছে। “আমাদের শিপমেন্টটি ইনস্যুরড ছিল, তবে সব ডকুমেন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়াটা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে,” বলেন তিনি।

ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন, কার্গো ভিলেজে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জাম, প্রশিক্ষিত কর্মী কিংবা আগুন নিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

এক সিএন্ডএফ কর্মকর্তা বলেন, “এখানে দাহ্য বস্তু সংরক্ষণের পরও কার্যকর ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা নেই। এটি মারাত্মক অবহেলা।”

এটি প্রথম নয় ২০১৩ সালেও একই স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল। তখন ক্ষয়ক্ষতি সীমিত থাকলেও এবার তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগের ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেক পুরোনো কর্মচারী।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “তখন আগুন ছিল মাত্র ৩০ মিনিটের মতো, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছিল। এবার বুঝতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে সেই হাজারো সিএন্ডএফ কর্মীর জীবনে, যারা প্রতিদিন এই কার্গো ভিলেজে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাজ বন্ধ থাকায় তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, পুনরুদ্ধার ও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ পুরোপুরি স্থবির হয়ে থাকবে।

বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তবে অনেকে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কতটুকু ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব হবে।

বিমানবন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বারবার এমন অগ্নিকাণ্ড এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনামকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।