বিদেশিদের হাতে যেতে পারে কক্সবাজার রেলস্টেশন: দুই বছরেও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম

0
126
ছবি - সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের রেলস্টেশন কক্সবাজার নির্মাণের দুই বছর পার হলেও এখনো চালু হয়নি এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়তলা বিশিষ্ট এই আধুনিক রেলস্টেশন ভবনের অধিকাংশ অংশ আজও অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে এখন স্টেশনটির দায়িত্ব বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে।

২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর রেলস্টেশনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ১ ডিসেম্বর চালু হয় ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দুটি ট্রেন ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ ও ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। তবে স্টেশন ভবনের ভেতরে থাকা কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধাগুলো এখনো যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি।

রেলওয়ের তথ্যমতে, স্টেশনটি সম্পূর্ণরূপে চালু হলে শুধু ইউটিলিটি খাতে প্রতি মাসে ব্যয় হতে পারে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে বহন করা কঠিন।

কাচঘেরা আলিশান এই ভবনটি বাইরে থেকে দৃষ্টিনন্দন হলেও ভেতরে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই, বন্ধ রয়েছে চলন্ত সিঁড়িগুলো, টিকিট কাউন্টার ও যাত্রীসেবা কেন্দ্র চালু হয়নি। যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য একটি মাত্র টয়লেট খোলা থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। কোথাও ব্যারিকেড, কোথাও আবর্জনার বিন দিয়ে পথ রুদ্ধ।

ছয়তলা ভবনের প্রতিটি তলায় থাকার কথা ছিল দোকান, রেস্টুরেন্ট, হোটেল রুম, অফিস, লাউঞ্জ ও মাল্টিপারপাস হলের মতো নানা সুবিধা। কিন্তু বাস্তবে এসবের বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে শিগগিরই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। পাঁচতারকা হোটেল বা সমমানের অবকাঠামো পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান চাইলে বিদেশি অংশীদার নিয়ে যৌথভাবে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, “আমরা চাই দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার রেলস্টেশনের দায়িত্ব নিক। দেশীয় প্রতিষ্ঠান চাইলে জয়েন্ট ভেঞ্চারে অংশ নিতে পারবে, তবে তাদের বিদেশি অংশীদারদের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।”

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান বলেন, “পরিকল্পনার অভাবেই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এত বড় বিনিয়োগের সুফল না পেয়ে রেলওয়ে এখন সমস্যায় পড়েছে। তবে সবকিছুতেই বিদেশিদের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করে তোলা জরুরি।”

২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেছে চায়নার দুটি প্রতিষ্ঠান—চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (CREEC) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (CCECC), সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

দুই বছর পরও কক্সবাজারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বারটি প্রায় অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় প্রশ্ন উঠছে এর মালিকানা ও পরিচালনা নিয়ে। বিদেশিদের হাতে দায়িত্ব গেলে বাড়বে দক্ষতা, নাকি হারাবে জাতীয় নিয়ন্ত্রণ? এই প্রশ্ন এখন কক্সবাজারবাসীর মুখে মুখে।