বন্ধুর মুখোশে শত্রু: মুসলিম জাহানের নিঃশব্দ বিপর্যয়

55

আত্মভোলা জাতি, অতীতের সোনালি ইতিহাস বিস্মৃত হয়ো না। বারমুডা, ভিয়েতনাম কিংবা উগান্ডা, বুরুন্ডির গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকার যত মাথাব্যথা, কখনো কি সৌদি, কাতার কিংবা কুয়েতের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের থেকে একটি বাক্যও বলতে শুনেছেন? শুনবেন না। চুক্তির স্বার্থেই পাহারা দেওয়া হয়। তরল সম্পদে স্বার্থ মিলছে।

আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন কিংবা ইরাকের ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে মোড়লদের যে অবস্থান, তা কি জর্ডান, মিশর কিংবা বাহরাইনের উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধেও দেখো? দেখবে না। যারা কবুল বলে মাথা নত করেছে, তাদের তারা দুলাভাই বলে ডাকে! স্বার্থ ফুরোতেই শালা বলে লাথি মেরে বিদায় করে। এটা তাদের ঐতিহাসিক চরিত্র।

বিন লাদেনের উত্থান, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ—এইসবের পেছনে কারা? আমেরিকাই তো। আবার তাদের ধ্বংস করতেও উঠে-পড়ে লেগেছে আমেরিকা। ইসরাইল পশ্চিমাদের দাবার গুটি, আর সেই দাবার খুঁটি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকা। ইসরাইল এমনকি রাগান্বিত চোখে তাকানোর আগে আমেরিকার পরামর্শ নেয়। যাকে যখন প্রয়োজন মদদ দেয়, আবার যাকে প্রয়োজন দমন করে—এই রীতি দিয়েই চলছে মধ্যপ্রাচ্য।

ইরানে হামলার পূর্বে গোপনে আমেরিকার অস্ত্র ও ইঙ্গিত এসেছিল। আমেরিকা কখনো কাউকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছে, এমন নজির বিশ্ব ইতিহাসে নেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে উসকে দিয়ে যখন পরিস্থিতি ঘোলাটে, তখন যুদ্ধ থামানোর শর্তে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের সিংহভাগ নিজের করে নিচ্ছে। শুরুতে মন্ত্রণা, পরে কুমন্ত্রণা দিয়ে—একটার পর একটা সমৃদ্ধ দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া—সবাই তার সাক্ষী।

পৃথিবীর সবচাইতে মূল্যবান খনিজ আফ্রিকায়। অথচ সবচেয়ে দরিদ্র মহাদেশও আফ্রিকা। হিরা, ইউরেনিয়াম লুটে নিয়ে দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব দেশের অর্থনীতি, বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকাঠামো এবং সংস্কৃতি আমেরিকার ছদ্মসন্ত্রাসের কবলে ধ্বংস হয়ে গেছে। শকুনের চোখ যেখানে পড়ে, সেখানে আর সুখ বা শান্তি থাকে না। অনেকেই ফেরেশতার মুখোশ পরে আসে।

আমেরিকা যার বন্ধু, তার শত্রুর প্রয়োজন হয় না—এই সহজ সত্য সৌদি আরব বুঝতে পারে না। কাতার-কুয়েত বোঝার চেষ্টা করে না। আমিরাতে বিলাসী হোটেল আছে—সেখানে নারী, মদ আর নষ্ট চরিত্র এক ছাদের নিচে। মুসলিমদের চৈতন্যের এমন পতন দুঃখজনক এবং স্মরণকালের মধ্যে দুর্লভ। ফিলিস্তিন প্রায় নিশ্চিহ্ন, ইরান আজকের লক্ষ্য, পাকিস্তান পরবর্তী। জর্ডান, মিশর কেউ রেহাই পাবে না।

সৌদি যদি মনে করে সে নিরাপদ, তবে সে ভয়াবহ ভ্রান্তির মধ্যে আছে। তেলের জন্য সৌদিই পরবর্তী নিশানা। ইসরাইলের চোখে কাপড় বাঁধা থাকলেও দাবার চাল আমেরিকার হাতে।

সতর্ক হও, মুসলিম! শিয়া-সুন্নি বিতর্কে বিভক্ত হবার সময় নয় এটি। যারা আল্লাহকে মানো, তারা এক হও। রবের রশ্মিকে শক্ত করে ধরো। ইরান হেরে গেলে মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব তুলোর মতো উড়ে যাবে। ঘর ও পর—উভয় শত্রুকেই চিহ্নিত করতে হবে। নয়তো ইতিহাসে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময় এসে গেছে।

ঈমানি হুঙ্কারে শত্রু পালাবে—এমন আশায় অলসতা চলবে না। এখন সম্পর্ক গড়ো রবের সঙ্গে। ড্রোন, মিসাইল—সবকিছুই চাই। তসবিহ আর তরবারির যুগ পেরিয়ে এসেছে। প্রাপ্তি নয়তো মৃত্যু—বীরের জাতিকে কোনো একটি পথ বেছে নিতেই হবে।

সামনে শুধু বিপদের পথ। তাই প্রস্তুতি নাও সর্বাত্মকভাবে। রণের মাঠে বাঁধা দিলে বুড়োদেরও বলি দিতে হবে, যদি দরকার পড়ে। তবুও লক্ষ্যচ্যুত হবে না। আত্মবিস্মৃত হলে মুক্তি নেই। ইতিহাসের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত হও।

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।

raju69alive@gmail.com