সামাদ খান ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার দারাজ উদ্দীন মোল্যার ডাঙ্গী গ্রামের আলিম মুন্সীর পরিবারকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ ধারাবাহিক ভাবে হামলা মামলা ছাড়াও হুমকী প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। রোববার বিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন সাংবাদিকদের কাছে আলিম মুন্সীর স্ত্রী জাহেদা বেগম। এদিকে পরিবারের সদস্যদের উপর বার বার নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই নারী জানান যে, গত ৩১ মে প্রতিপক্ষের সিয়াম খান ও তার মা ঝরনা বেগম তাদের পক্ষের আরো দুইজনকে নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে জাহেদা বেগম ও স্বামী আলিম মুন্সীকে মারধর করে আহত করে।
তিনি জানান, কয়েক দিনের ঘন বৃষ্টিতে তার বাড়ীর মাটি ধুয়ে প্রতিবেশী সিয়াম খা’র জমিতে যায়, যা তুলতে গেলে সিয়াম খা’র মা ঝর্ণা বেগম গালমন্দ করে। কিছু সময়ের মধ্যে তারা সংগঠিত হয়ে স্বামী আলিম মুন্সীর উপরে হামলা চালায়। এতে আলিম মুন্সী আহত হলে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ওই মামলা নথিভুক্ত করা হয়নি, ফলে বাধ্য হয়ে ০১ জুন তারিখে এঘটনায় আদালতে অভিযোগ করা হয়। তিনি আরো অভিযোগ করেন, থানা কর্তৃপক্ষ তার (জাহেদা) মামলা রুজু না করলেও ০৫ জুন তারিখে প্রতিপক্ষ ঝর্ণা বেগমের দেয়া অভিযোগটি নথিভুক্ত করে পুলিশ। ওই অভিযোগ পত্রে জাহেদা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করা হয়, যা সম্পুর্ণ হয়রানিমূলকভাবে করা হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
তিনি আরো দাবী করেন, প্রতিবেশি সিয়াম খাঁ গংরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতি মুহুর্তে হুমকী ও হামলার ঘটনা ঘটালেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে সাহস পায় না। এতে তারা আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। তারা মূলত নানাভাবে তার (জাহেদা) পরিবারকে উচ্ছেদের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবী জাহেদার।
জাহেদা আরো বলেন, জমিজমা বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশি সিয়াম খাঁ গংরা ইতিপুর্বে কয়েকবার হুমকী প্রদানসহ হামলা মামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারী/২৫ মাসে সিয়াম খাঁর নেতৃত্বে তার (জাহেদা) কিশোর পুত্রকে বেধড়ক মারধর করে। প্রতিবাদ করলে সিয়াম খাঁ তার সঙ্গীদের নিয়ে আমার বাড়ির পাশে বসে মাদক সেবনরত অবস্থায় আমাকে (জাহেদা) উদ্দেশ্য করে অশ্লিল মন্তব্য ও বিভিন্ন ধরনের খারাপ ইঙ্গিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে মাদকের গন্ধ ও তাদের এমন অসৌজন্যমুলক আচরণে অতিষ্ট হয়ে, তাদের অনত্র সরে যাওয়ার কথা বলায় সিয়াম খাঁ ক্ষুব্দ হয়ে তার সঙ্গীদের নিয়ে আমার বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে আমার (জাহেদা) শরীরের বিভিন্ন অংশে নিলাফুলা জখম করে এবং আমার গলায় থাকা একটি স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে স্থানীয়রা সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করে প্রতিপক্ষ সিয়াম খা’কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও আমি ঐ টাকা সকলের উপস্থিতিতে ছেড়ে দেই। তবে ওই দিন আবারো আমার বাড়ি এসে প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে চরভদ্রাসন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি।
ঘটনার সত্যতা পেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে উপস্থাপন করে। ওই মামলায় জামিন নিয়ে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে আমাদের উপর আরো বেশি জুলুম অত্যাচার করতে থাকে। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার সাথে এ ধরনের অন্যায়মুলক কর্মকান্ড চরভদ্রাসন থানা পুলিশকে মৌখিক ও লিখিত জানালেও আজ অবধি সুবিচার পাইনি।
তিনি দাবী করেন, আইনের মাধ্যমে তারা অপরাধের শাস্তি না পাওয়ায় আরো বেশী ক্ষুব্দ হয়ে পড়েছে। প্রতিমুহুর্তে নানা ধরনের খারাপ মন্তব্য ও হুমকী ধামকি দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবী করে প্রতিকার চেয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেছেন।
তবে চরভদ্রাসন থানার অফিসার ইনচার্জ রজিউল্লাহ খান জানান, ইতিপুর্বে জাহেদা বেগম হুমকী প্রদানের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরী করেছিলো, যার সত্যতা পাওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, গত ৩১ মে তারিখের ঘটনায় দুই পক্ষই মামামারি করে, এসময় ঝর্ণা বেগমের হাতের আঙ্গুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ঝর্ণা বেগম সার্টিফিকেট সহ অভিযোগ দেয়ায় তদন্ত করে মামলা নথিভুক্ত করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।