হলি আর্টিজান হামলা: মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড – হাইকোর্টের যুক্তি

90
সুপ্রীমকোর্ট। ফাইল ছবি

প্রধান প্রতিবেদকঃ রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু হাইকোর্ট সেই রায় পর্যালোচনা করে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের ২২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও, তারা হামলার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং সহায়তা করেছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(১)(ক)(আ) ধারায় আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিচারিক আদালত এই আইনের ব্যাখ্যায় ভুল করে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে, যা হাইকোর্ট গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। তাই ওই রায় সংশোধন করা হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ, জবানবন্দি ও উভয়পক্ষের যুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসামিদের দোষ প্রমাণিত হলেও মৃত্যুদণ্ড যথোপযুক্ত নয়। বরং, তারা আমৃত্যু কারাদণ্ড পেলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইতালীয়, জাপানি, ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকরা। পুলিশের অভিযানে দুই কর্মকর্তা নিহত হন। ওই ঘটনার পর দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৯ সালে ট্রাইব্যুনাল সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্টে আপিলের শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর তাদের সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই রায়ে সাজাপ্রাপ্ত সাতজন হলেন:
১. রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান
২. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী
৩. আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ
৪. হাদিসুর রহমান
৫. আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ
৬. মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন
৭. শরিফুল ইসলাম খালেদ

হাইকোর্টের মতে, এই সাজা বাংলাদেশের আইন ও ন্যায়বিচারের আদর্শ অনুযায়ী হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তিকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে।