আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। দেশজুড়ে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ প্রস্তুতি, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা আজ এক নতুন যাত্রায় পা রাখল।
এইচএসসি পরীক্ষাকে আমাদের দেশে শুধু একটি একাডেমিক পরীক্ষা হিসেবে নয়, বরং একজন তরুণ শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম মোড় ঘোরানো অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়। এটি যেমন উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে, তেমনি গড়ে তোলে ভবিষ্যতের পেশা ও পরিচয়ের ভিত। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে যে চাপ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়, তা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও, অর্থনৈতিক চাপে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্বের চাপ, এবং শিক্ষা খাতে বাজেট ঘাটতির প্রভাব সরাসরি প্রভাব ফেলছে শিক্ষার্থীদের ওপর। অনেকেই পর্যাপ্ত টিউশন কিংবা সহায়ক উপকরণ পায়নি, যার ফলে গ্রাম ও শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে।
তবে আশার দিক হলো, প্রযুক্তির ব্যবহার দিনে দিনে শিক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করছে। অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল কন্টেন্ট এবং স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী তথ্যের সহজ প্রাপ্তি পাচ্ছে। কিন্তু এসব সুবিধা তখনই সুফল বয়ে আনবে, যখন তা সমানভাবে সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাবে।
আমরা আশা করি, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সব শিক্ষার্থী ন্যায্য সুযোগ পাবে, প্রশ্নপত্র থাকবে মানসম্মত ও সঠিক পর্যায়ের, এবং প্রশাসনের নজরদারিতে কোনো ধরনের নকল বা অনিয়মের ঘটনা ঘটবে না। এই এক মাসের যাত্রা কেবল একটি পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার অংশ।
পরিশেষে, এই কঠিন সময়ে পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকা অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসন—সবার প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। আর আমাদের এই তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা—তারা যেন নিজেদের মেধা, মনন ও অধ্যবসায় দিয়ে গড়ে তোলে একটি আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।