বিশ্বসেরা ২০ প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব: যারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০২৪-২৫ সালে

82

অনলাইন ডেস্কঃ প্রযুক্তি জগতটা যেন এক চলমান নদী, প্রতিনিয়ত তার ধারা বদলাচ্ছে। আর এই বদলের মূল কারিগর কিছু অসাধারণ মানুষ। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে কারা সারা বিশ্বে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছেন? তাঁদের দূরদর্শী চালচলন, নিজ নিজ কোম্পানির বিশালত্ব আর সামগ্রিক প্রভাবের উপর নির্ভর করে এখানে ২০ জন দারুণ প্রযুক্তি ব্যক্তিত্বের একটা তালিকা দেওয়া হলো।

১. টিম কুক – সিইও, অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড
টিম কুক ১৯৯৮ সালে এই সংস্থায় যোগ দেন। এরপর ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট স্টিভ জবসের পর তিনি সিইও-র চেয়ারে বসেন। তাঁর সুদক্ষ হাতেই অ্যাপল আজ বিশ্বের অন্যতম দামি কোম্পানি।

২. সুন্দর পিচাই – সিইও, অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড (গুগল)
২০০৪ সালে গুগলে যোগ দিয়েছিলেন সুন্দর পিচাই। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট গুগলের সিইও হন তিনি, আর ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর অ্যালফাবেটেরও সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন। গুগলের সব নতুন নতুন আবিষ্কারের পেছনে তাঁর অবদান রয়েছে।

৩. সত্য নাদেলা – চেয়ারম্যান ও সিইও, মাইক্রোসফট
১৯৯২ সাল থেকে মাইক্রোসফটে কাজ করছেন সত্য নাদেলা। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি সিইও-র পদে আসেন। তাঁর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে মাইক্রোসফট ক্লাউড কম্পিউটিং আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) নতুন নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে।

৪. অ্যান্ডি জ্যাসি – প্রেসিডেন্ট ও সিইও, অ্যামাজন
অ্যামাজনে ১৯৯৭ সালে যোগ দিয়েছিলেন অ্যান্ডি জ্যাসি। ২০২১ সালের ৫ জুলাই জেফ বেজোসের পর তিনি অ্যামাজনের সিইও হন। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস (AWS)-এর আজকের সাফল্যের পেছনে তাঁর বড় একটা অবদান আছে।

৫. জেনসেন হুয়াং – প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসিডেন্ট ও সিইও, এনভিআইডিআইএ
এনভিআইডিআইএ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জেনসেন হুয়াং ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাস থেকেই সংস্থাটির সিইও হিসেবে কাজ করছেন। সেমিকন্ডাক্টর আর এআই চিপের দুনিয়ায় এনভিআইডিআইএ-কে তিনি এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন।

৬. মার্ক জাকারবার্গ – প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিইও, মেটা প্ল্যাটফর্মস
ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মেটা প্ল্যাটফর্মস-এর সিইও। সামাজিক যোগাযোগের পাশাপাশি তিনি মেটাভার্সের এক বিশাল স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন।

৭. লিসা সু – চেয়ারম্যান ও সিইও, এএমডি
২০১২ সালের জানুয়ারিতে এএমডিতে এসেছিলেন লিসা সু। ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর তিনি সিইও-র পদে বসেন। তাঁর নেতৃত্বে এএমডি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ইন্টেলের সাথে জোরদার টক্কর দিচ্ছে।

৮. প্যাট গেলসিঙ্গার – সিইও, ইন্টেল
১৯৭৯ সালে ইন্টেলে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন প্যাট গেলসিঙ্গার। ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি আবার সিইও হিসেবে ইন্টেলে ফেরেন। ইন্টেলকে আবার সেমিকন্ডাক্টর বাজারে সবার উপরে নিয়ে আসার জন্য তিনি নিরন্তর চেষ্টা করছেন।

৯. সি.সি. ওয়েই – সিইও, টিএসএমসি
১৯৯৮ সালে টিএসএমসিতে যোগ দিয়েছিলেন সি.সি. ওয়েই। ২০২০ সালের জুন মাসে তিনি সিইও হন। টিএসএমসি বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

১০. হক তান – প্রেসিডেন্ট ও সিইও, ব্রডকম ইনকর্পোরেটেড
২০০৬ সালে আভাগোর সিইও হয়েছিলেন হক তান (এই আভাগোই পরে ব্রডকমকে কিনে নেয়)। ২০১৬ সালে ব্রডকম ইনকর্পোরেটেড গঠনের জন্য একীভূতকরণের পুরো ব্যাপারটা তিনিই সামলেছেন। সেমিকন্ডাক্টর দুনিয়ায় তিনি একজন দারুণ প্রভাবশালী ব্যক্তি।

১১. শান্তনু নারায়ণ – চেয়ারম্যান, প্রেসিডেন্ট ও সিইও, অ্যাডোব
১৯৯৮ সালে অ্যাডোবে যোগ দিয়েছিলেন শান্তনু নারায়ণ। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সিইও হন। অ্যাডোবের সব সৃজনশীল সফটওয়্যার আর ডিজিটাল প্রোডাক্টগুলো তাঁর হাত ধরেই ব্যাপক সফল হয়েছে।

১২. আমানসিও ওর্তেগা – প্রতিষ্ঠাতা ও সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার, ইনডিটেক্স (জারা)
জারার প্রতিষ্ঠাতা আমানসিও ওর্তেগা (জারা ১৯৭৫ সালে শুরু হয়েছিল) ইনডিটেক্সের একজন অন্যতম প্রধান শেয়ারহোল্ডার এবং প্রযুক্তিতে বড় বিনিয়োগকারী। ২০১১ সালে তিনি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিলেও তাঁর প্রভাব এতটুকুও কমেনি।

১৩. ড্যানিয়েল ঝাং – প্রাক্তন সিইও/চেয়ারম্যান আলিবাবা
২০০৭ সালে আলিবাবায় যোগ দিয়ে ড্যানিয়েল ঝাং ২০১৫ সালের মে মাসে সিইও এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পদত্যাগ করলেও ক্লাউড আর বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজে তিনি এখনো সক্রিয়।

১৪. অরবিন্দ কৃষ্ণ – চেয়ারম্যান ও সিইও, আইবিএম
১৯৯০ সালে আইবিএমে যোগদানকারী অরবিন্দ কৃষ্ণ ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল সিইও হন। আইবিএমকে ক্লাউড আর এআই খাতে নতুন করে গড়ে তোলার পেছনে তাঁর অবদান সত্যিই অসাধারণ।

১৫. ইভান স্পিগেল – সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, স্ন্যাপ ইনকর্পোরেটেড (স্ন্যাপচ্যাট)
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে স্ন্যাপচ্যাট শুরু করার পর থেকেই ইভান স্পিগেল এর সিইও। তিনি ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন আর অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়ে জোরদার কাজ করছেন।

১৬. ব্রায়ান চেস্কি – সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সিইও ও কমিউনিটির প্রধান, এয়ারবিএনবি
২০০৮ সালে এয়ারবিএনবি সহ-প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে ব্রায়ান চেস্কি এর সিইও। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এয়ারবিএনবি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ আর থাকার ব্যবস্থায় এক নতুন বিপ্লব এনেছে।

১৭. পোনি মা – সহ-প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিেএও, টেনসেন্ট
১৯৯৮ সালের নভেম্বরে টেনসেন্ট সহ-প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে পোনি মা এর সিইও। গেমিং, সোশ্যাল মিডিয়া আর ফিনটেক শিল্পে টেনসেন্টের একটা বিশাল প্রভাব আছে।

১৮. ওয়াং চুয়ানফু – প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিইও, বিওয়াইডি কোম্পানি
১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিওয়াইডি শুরু করার পর থেকে ওয়াং চুয়ানফু এর সিইও। বিওয়াইডি এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) আর ব্যাটারি প্রস্তুতকারক।

১৯. নিল মোহন – সিইও, ইউটিউব
২০০৮ সালে গুগলে যোগ দিয়েছিলেন নিল মোহন। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইউটিউবের সিইও হন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ তাঁর হাতেই।

২০. রিড হেস্টিংস – সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান, নেটফ্লিক্স
১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট নেটফ্লিক্স সহ-প্রতিষ্ঠা করার পর রিড হেস্টিংস ১৯৯৯ থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কো-সিইও হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নেটফ্লিক্সের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন।

এই মানুষগুলো শুধু তাঁদের নিজেদের কোম্পানির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন না, বরং সারা বিশ্বে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নতুন নতুন পথ তৈরি করছেন আর ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন।