সাইফুল ইসলাম খাজা দাউদকান্দি (কুমিল্লা): কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দলপুর ১ নম্বর মডেল ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহাসিক “জিয়া খাল” আজ দীর্ঘদিনের অবহেলায় প্রাকৃতিক গতিপথ হারাতে বসেছে। প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল এক সময় গোটা অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনের প্রাণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে খালটি ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা ও কাদা দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমেও খালের মধ্যে পানি প্রবাহ দেখা যায় না।
এই খালটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের হাত ধরে, যিনি “খাল কাটা কর্মসূচি”র অংশ হিসেবে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে দাউদকান্দির গোমতী নদী থেকে শুরু করে কাজের কোনা, দোলু তার কান্দি, গয়েশপুর, কেশুরা, সুন্দলপুর, বড়পাড়া, রাঙ্গা, সাগুলা, ইছাপুর, আমিরাবাদ হয়ে গৌরীপুর পর্যন্ত এই খাল খনন করেছিলেন।
বর্তমানে এই খালটির অবস্থান দাউদকান্দি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে। একসময় এই খাল দিয়েই গোমতী নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে আশেপাশের হাজার হাজার হেক্টর জমিকে সেচ সুবিধা দিত। এখন সেই খাল চরমভাবে পরিত্যক্ত। খালের নানা জায়গায় মাটি ও কচুরিপানার কারণে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না বললেই চলে।
কৃষকেরা বলছেন, খালের পানির অভাবে আলু, গম, ধান, পাট এমনকি শাক-সবজিও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। একমাত্র ভুট্টা ছাড়া আর কোনো ফসলের উপযুক্ততা থাকছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ২৫ বছরেও কোনো সরকার এই খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে খালটি সংরক্ষণের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও খালটি পরিষ্কারের কিংবা খননের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি।
একজন কৃষক বলেন, “শুধু পানি পাইলে, আমরা আবারও হাজার হাজার একর জমিতে ধান-আলু-পাট উৎপাদন করতে পারি। খালটা যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সরকারিভাবে খনন করে দেয়, তাহলে এ এলাকার কৃষি আবারও বাঁচবে।”
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ও কৃষকরা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছেন। তারা মনে করেন, যদি এখনই এই ঐতিহাসিক খালটি পুনঃখনন ও পরিষ্কার না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।