অবসরপ্রাপ্তদের অধিকার: গ্রামীণ ব্যাংকের নীরব অমানবিকতা

397

গ্রামীণ ব্যাংক – একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান, যার নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ইতিহাস বাংলাদেশের গর্ব। ক্ষুদ্র ঋণের সফল প্রয়োগে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রেখে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে। এই অসাধারণ অর্জনের পেছনে ছিলেন শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নন, বরং ছিলেন হাজার হাজার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, যাঁরা বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুর্শেদা জামানের স্বাক্ষরিত চিঠি।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই কর্মীদের অনেকেই আজ অবসরে গিয়ে অবহেলিত, বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। তাদের পাওনা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ অনুযায়ী, কর্মীরা সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন ও ভাতা পাওয়ার কথা। চিকিৎসা ভাতা, টি.এ/ডি.এ, লাঞ্চ ভাতা, পেনশন, গ্রাচ্যুটি, কল্যাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত সুবিধা—সবই এই নীতিমালায় উল্লেখিত। এমনকি ২০০৪ সালের ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী উৎসব বোনাস ও বৈশাখী ভাতা চালুর নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এসব সুবিধা অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে কার্যকর করা হচ্ছে না।

যুগ্ন সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠি

সরকারি আদেশ থাকা সত্ত্বেও কেন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না—এই প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত যৌক্তিক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুর্শেদা জামানের স্বাক্ষরিত চিঠি কিংবা যুগ্ম সচিব এ.বি.এম আবুল কাসেমের নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না বলেই অভিযোগ উঠছে। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন জাগে, তেমনি মানবিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

যেসব কর্মীরা এক সময় গ্রামীণ ব্যাংকের মেরুদণ্ড ছিলেন, তারা আজ চিকিৎসা ভাতা বা কল্যাণ তহবিলের অর্থের জন্য অপেক্ষায় দিন গুনছেন। এমনকি উৎসবের সময় দুটো উৎসব বোনাস না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকে। এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক বঞ্চনা নয়, এটি এক ধরনের নৈতিক অবিচার।

আমরা চাই, অবিলম্বে এসব অভিযোগ তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সরকার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা। নীতিমালার অস্পষ্টতা নয়, কর্মীদের প্রতি ন্যায্যতা ও মানবিকতা হোক নির্দেশক।

একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করে তাদের প্রাপ্যটুকু নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে। নোবেল পুরস্কার শুধুমাত্র একজনের নয়, এটি হাজারো কর্মীর সম্মিলিত অর্জন। সেই সম্মানের ভার রক্ষা করতে হলে, প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত অবসরপ্রাপ্তদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।