জুলাই-২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক সংগ্রাম নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

61

নিউজ ডেস্কঃ ‘জুলাই-২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ও সংস্কৃতির সংগ্রাম’ শীর্ষক একটি সেমিনার বুধবার বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীর সেমিনার কক্ষে। গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আয়োজনে আয়োজিত এই সেমিনারে দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতি কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান লালটু। সঞ্চালনা করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। মূল প্রবন্ধও উপস্থাপন করেন তিনিই।

আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, দীপা দত্ত, দীনবন্ধু দাশ, সৈয়দ আবুল কালাম, কবি রঘু অভিজিৎ রায়, বিমল কান্তি দাস, মোঃ ইকবালুল হক খান, খন্দকার শাহ আলম, অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, কবি কামারুজ্জামান, কবি মাশুক শাহী সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জনগণ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল, আজ সেই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে হাঁটছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে জনমনে নতুন করে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে।”

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষাপটে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য সময়ের দাবি।”

আলোচকরা স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনে সংস্কৃতি কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। স্বৈরাচারী সরকার কারফিউ, দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলন থামাতে চাইলেও, সংস্কৃতি কর্মীরা ভয়কে উপেক্ষা করে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। গত বছরের ২৬ জুলাই ঢাকায় কারফিউ ভেঙে গানের মিছিল করে তারা সাহস জুগিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের।

৩০ জুলাই সংস্কৃতি কর্মীরা আবারও গানের মিছিল নিয়ে ঢাকা জিরো পয়েন্ট থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে অগ্রসর হন। যদিও মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবু তারা রাস্তার ওপর বসে গান, কবিতা ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ চালিয়ে যান।

২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্রোহযাত্রা’—প্রেসক্লাব থেকে শুরু হওয়া এই বিশাল মিছিল শহীদ মিনারে গিয়ে রূপ নেয় প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষের সম্মিলনে। ঐদিনই সরকার পতনের এক দফা দাবি জানানো হয়, যার ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

আলোচকরা বলেন, ইতিহাসের নানা বাঁকে—ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সংস্কৃতি কর্মীরা যুগে যুগে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন।

সেমিনার শেষে সংগঠকদের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঐক্য আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।